বর্তমানে শিশু থেকে বৃদ্ধ সকল বয়সের ব্যক্তির মধ্যে একটা সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা যাচ্ছে তা হলো পায়খানা না হওয়া। পায়খানার বেগ থাকা সত্ত্বেও অনেক সময় ধরে টয়লেটে বসে থাকলেও পায়খানা হয় না। ঠিকমত পায়খানা না হওয়ার কারণে সারাদিন কাটে অস্বস্তিতে এবং এর ফলে কোনো কিছুতেই মন বসে না। তাই আমরা আজ আলোচনা করব কি কারণে এই স্বাস্থ্য সমস্যা হয় অর্থাৎ পায়খানা হয় না এবং এই সমস্যা থেকে মুক্তির উপায় কি কি। আরও দেখুনঃ গ্যাস্ট্রিক থেকে বাঁচতে ঘরোয়া চিকিৎসা
পায়খানা না হওয়ার কারণ
- আঁশযুক্ত খাবার কম খাওয়া
- পানি কম পান করা
- মানসিক চাপে থাকা
- সময়মত পায়খানা না করা
- যথেষ্ট শারিরীক পরিশ্রম না করা
- আমিষ জাতীয় খাবার অধিক খাওয়া
- অধিক পরিমানে ওষুধ খাওয়া
- অস্বাস্থ্যকর টয়লেট ব্যবহার
পায়খানা না হওয়ার মূল কারণ হলো কোষ্ঠকাঠিন্য। কোষ্ঠকাঠিন্যর জন্য পায়খানা শক্ত ও কষা হয়ে যায়। ফলে দিনের পর দিন পায়খানা বন্ধ হয়ে যায়। কিছু খাদ্যাভ্যাস ও অস্বাস্থ্যকর জীবন যাপনের জন্য এই স্বাস্থ্য সমস্যাটি হয়ে থাকে। পায়খানা না হওয়ার পিছনে যে সকল কারণ আছে তা নিচে আলোচনা করা হলো। আরও দেখুনঃ ব্রন কমানোর উপায় কি | জেনে নিন একদিনেই দ্রুত ব্রণ দূর করার উপায়
আঁশযুক্ত খাবার কম খাওয়াঃ পায়খানা না হওয়ার অন্যতম কারণ হলো আঁশযুক্ত খাবার কম খাওয়া। আঁশযুক্ত খাবার কম খাওয়ার জন্য পায়খানা পেটের ভিতর শক্ত হয়ে থাকে। ফলে পায়খানা করার সময় কষ্ট হয়। আঁশযুক্ত খাবার পরিপাক তন্ত্রে পানি ধরে রেখে পায়খানা নরম করতে সাহায্য করে। ফলে পায়খানা করতে কোনো সমস্যা হয় না।
পানি কম পান করাঃ পায়খানা না হওয়ার আরও একটি অন্যতম কারণ হলো পানি কম পান করা। আমরা অনেকেই পানি কম খেয়ে থাকি। ফলে আমাদের খাবার সহজে পরিপাক হয় না। কারণ পানি খাদ্য হজমে সাহায্য করে থাকে। পানি পায়খানকে নরম ও তরল রাখে। ফলে সহজে পেট থেকে পায়খানা বের হয়।
মানসিক চাপে থাকাঃ অতিরিক্ত মানসিক চাপে থাকলে সহজে পায়খানা হয় না। বেশি দুঃচিন্তার কারণে পরিপাক তন্ত্র ঠিক মত কাজ করে না। ফলে খাবারও ভালোমত হজম হয় না, তাই পায়খানা হয় না। মানসিক চাপ থেকে মুক্ত থাকার জন্য নিয়মিত পরিবার ও বন্ধুদের সাথে সময় কাটাতে পারেন। মাঝে মাঝে কোথাও থেকে ঘুরে আসতে পারেন। আরও দেখুনঃ মুখের কালো দাগ দূর করার উপায়
সময়মত পায়খানা না করাঃ অনেকেই বিশেষ করে কর্মজীবী মহিলারা পায়খানার বেগ আসলেও চেপে রাখে। এর ফলে পায়খানা পেটের ভিতর জমা হয়ে শক্ত হয়ে যায় এবং বের হতে সমস্যা হয়। যে সব মহিলারা বাইরে কাজ করে তারা যথেষ্ট নিরাপত্তা ও পরিচ্ছন্ন টয়লেটের অভাবে পায়খানা চেপে রাখেন। তাই তারা কোষ্ঠকাঠিন্য সহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে।
যথেষ্ট শারিরীক পরিশ্রম না করাঃ যে সব ব্যক্তিরা বিশেষ করে বৃদ্ধ বয়সের ব্যক্তিরা শারিরীক পরিশ্রম কম করে থাকেন। ফলে তাদের পরিপাক তন্ত্র দুর্বল হয়ে পড়ে। আর এই কারণে খাদ্য হজম হতে অনেক সময় লাগে। ফলে তাদের পায়খানা অনেক কম হয়ে থাকে।
আমিষ জাতীয় খাবার অধিক খাওয়াঃ আমিষ জাতীয় খাবার পরিপাক হতে অনেক সময় লাগে। কারণ এই সব খাবারে চর্বি ও তেলের পরিমাণ বেশি থাকে।তাই যারা আমিষ জাতীয় খাবার বেশি খায় তাদের পায়খানা অনেক কম হয়ে থাকে।
অধিক পরিমানে ওষুধ খাওয়াঃ যারা একসাথে অধিক পরিমাণ ওষুধ খেয়ে থাকে তাদেরও এই সমস্যা দেখা দিতে পারে। এমন অনেক ওষুধ আছে যে গুলোর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার জন্য অনেক সময় পায়খানা বন্ধ হয়ে যায়। বেশি ওষুধ সেবন পরিপাক তন্ত্রকে দুর্বল করে দেয়। ফলে খাদ্য হজমে সমস্যা দেখা দেয় ও পায়খানার পরিমাণ কম হয়।
অস্বাস্থ্যকর টয়লেট ব্যবহারঃ অনেকেই অস্বাস্থ্যকর ও অপরিচ্ছন্ন টয়লেট দেখলে পায়খানা করতে পারেনা। টয়লেট চেপে রেখেই তারা টয়লেট থেকে বাহিরে চলে আসে। এতে করে পেটে পায়খানা শক্ত হয়ে যায় এবং পরবর্তীতে পায়খানা হতে চায় না।
উপরোক্ত কারণে সাধারণত পায়খানা হয় না। তাই এই সব সমস্যা গুলো এড়িয়ে চললে আপনি এই স্বাস্থ্য সমস্যা থেকে দূরে থাকতে পারবেন। আরও দেখুনঃ ডেঙ্গুজ্বর কি ও কেন হয়? এর চিকিৎসা
পায়খানা না হলে করণীয়
- আঁশযুক্ত খাবার বেশি খাওয়া
- প্রচুর পরিমানে পানি ও তরল জাতীয় খাবার খাওয়া
- শারীরিক পরিশ্রম করা
- নিয়মিত শরীর চর্চা করা
- আমিষ জাতীয় খাবার কম খাওয়া
- পায়খানা চেপে না রাখা
- মানসিকভাবে চাপ মুক্ত থাকার চেষ্টা করা
- প্যান বা লো কমোড ব্যবহার করা
- ওষুধ সেবনে সচেতন থাকতে হবে
আসুন এখন জেনে নিই পায়খানা না হলে আমরা কিভাবে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাব অর্থাৎ আমাদের করণীয় কাজ গুলো কি কি ।
আঁশযুক্ত খাবার বেশি খাওয়াঃ নিয়মিত পায়খানা হওয়ার অন্যতম নিয়ামক হলো আঁশযুক্ত খাবার। আঁশযুক্ত খাবার পরিপাকে পঞ্জের মত কাজ করে অর্থাৎ পানি ধরে রাখতে সাহায্য করে। ফলে সহজেই খাবার হজম হয় ও নিয়মিত পায়খানা হয়। যে সব খাবারে আঁশ বেশি থাকে সেই সব খাবার বেশি খেতে হবে।
লাল চাল ও লাল আটা বেশি খেতে হবে। কারণ এই সব খাবারে বেশি আঁশ থাকে। প্রতিদিন ডাল খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে। কারণ ডালে প্রচুর আঁশ থাকে। খোসাসহ ফল খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে। কারণ ফলের খোসাতে প্রচুর পরিমানে আঁশ পাওয়া যায়। তবে একবারে বেশি আঁশ জাতীয় খাবার খেলে সমস্যা হতে পারে। তাই ধিরে ধিরে খাবারের তালিকায় আঁশ জাতীয় খাবারের পরিমাণ বাড়াতে হবে।
প্রচুর পরিমানে পানি ও তরল জাতীয় খাবার খাওয়াঃ আমরা আগেই জেনেছি পানি খাদ্য হজমে সাহায্য করে ও পায়খানা নরম ও তরল রাখে। তাই বেশি বেশি পানি ও তরল জাতীয় খাবার গ্রহণ করতে হবে। অন্যান্য খাবার কম বেশি যায় খান না কেন আপনি যদি পানি বেশি করে পান করেন তবে আপনার এই সমস্যা সহজে হবে না।
শারীরিক পরিশ্রম করাঃ সারাদিন শুয়ে বসে না থেকে শারীরিক পরিশ্রম করার অভ্যাস করতে হবে। এতে আপনার পরিপাক তন্ত্র ভালো থাকবে ও খাবার সহজেই হজম হবে। তাই সামান্য করেও হলেও শারীরিক পরিশ্রম করতে হবে।
নিয়মিত শরীর চর্চা করাঃ যারা নিয়মিত শরীর চর্চা করে থাকেন তাদের কোষ্ঠকাঠিন্য রোগ সহজে হয়না। কারণ শরীর চর্চা করলে শরীরের সকল অঙ্গ প্রতঙ্গ সুস্থ ও সবল থাকে। সকল প্রকার খাদ্য সহজেই হজম হয় এবং ক্ষতিকর বর্জ্য শরীর থেকে বাহির হয়ে যায়। তাই প্রতিদিন কমপক্ষে ১ থেকে ২ ঘন্টা হাঁটাহাঁটি করার অভ্যাস করতে হবে। আর রাতে খাওয়ার পর কিছু সময় হাঁটাহাঁটি করতে হবে এতে খাবার সহজে হজম হবে।
খাবারের পর সঙ্গে সঙ্গে শুয়ে পড়া থেকে বিরত থাকতে হবে। একটু বসে থেকে পরে শুয়ে বিশ্রাম করা যেতে পারে। এতে করে পরিপাক তন্ত্র ভালো কাজ করে। আর খাবার খাওয়ার আগে একটু পানি পান করলে খাবার ভালো হজম হয়। ভাত খাওয়ার কমপক্ষে ৩০ মিনিট পর পানি পান করা হজমের জন্য খুবই উপকারী।
আমিষ জাতীয় খাবার কম খাওয়াঃ আমিষ জাতীয় খাবার সহজে হজম হয় না। তাই আমাদের উচিত আমিষ জাতীয় খাবার বিশেষ করে ফাস্ট ফুড কম খাওয়া। তেল জাতীয় খাবার সহজে হজম হয় না। তাই এই জাতীয় যত কম খাওয়া যাবে আপনার পরিপাক তন্ত্রের জন্য তত ভালো হবে।
পায়খানা চেপে না রাখাঃ পরিস্থিতি যেমনই হোক আমাদের পায়খানা চেপে রাখা উচিত নয়। এর ফলে শুধুমাত্র পায়খানায় বন্ধ হয় না কিডনিরও সমস্যা হয়। তাই আমাদের পায়খানার বেগ পাইলে তা চেপে রাখা ঠিক হবে না।
মানসিকভাবে চাপ মুক্ত থাকার চেষ্টা করাঃ মানসিকভাবে যারা দুঃচিন্তায় থাকে তাদের কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। তাই মানসিক চাপ দূরে রেখে স্বাভাবিক জীবন যাপন করার চেষ্টা করতে হবে। এতে করে শরীর ভালো থাকবে ও খাবার সহজে হজম হবে।
প্যান বা লো কমোড ব্যবহার করাঃ যাদের হাই কমোডের জন্য পায়খানা হয় না তাদের প্যান বা লো কমোড ব্যবহার করা উচিত। হাই কমোডের চাইতে লো কমোডে বসলে পেটে বেশি চাপ পরে এতে দ্রুত পায়খানা হয়ে থাকে। যাদের বাড়িতে লো কমোডের ব্যবস্থা নাই তারা পায়ের নিচে ছোট টুল নিতে পারেন।
ওষুধ সেবনে সচেতন থাকতে হবেঃ যে সকল ওষুধ খাওয়ার পর পায়খানা বন্ধ হয়ে যায় সেই সব ওষুধ সেবনের আগে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে নিতে পারেন। আবার একবারে অধিক পরিমাণ ওষুধ খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। যাদের পায়খানা ঠিকমত হচ্ছে না তারা উপরোক্ত করণীয় গুলো অনুসরণ করলে সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন বলে আমরা বিশ্বাস করি।
সুস্থতা সৃষ্টিকর্তার একটা বড় নিয়ামত। তাই সুস্থ থাকার জন্য আমাদের সকল নিয়ম কানুন ও সঠিক খাদ্যাভ্যাস মেনে চলা উচিত। আপনারা সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবন যাপন করবেন ও সুখে থাকবেন এটাই আমাদের কাম্য। এই রকম আরও উপকারী তথ্য পেতে আমাদের পেজে চোখ রাখুন ও আমাদের সাথে থাকুন। ধন্যবাদ।