গ্যাস্ট্রিক বা এসিডিটির সমস্যা আমাদের দেশে খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার, অনেকেরই বছরের প্রায় সময়ই ভুগতে হয় এ সমস্যায়। গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা হয় নাই এমন লোক পাওয়া যাবেনা, বুক জ্বালা, পেটের মাঝখানে চিনচিন ব্যথা , পেট ফাঁপা , ও ভার বোধ হওয়া, বুক ফেটে চাপ অনুভূত হওয়া, এসব হয়নি এমন মানুষ পাওয়া খুবই ভার। প্রচলিত কথায় একে বলে পেটে গ্যাস হয়েছে। পাকস্থলী থেকে খাদ্য হজম করার জন্য নির্গত হয় শক্তিশালী হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড, যা পাকস্থলীকেই যেন হজম করে না ফেলে, সে জন্য এটিতে থাকে প্রতিরোধে আবরণ, কোন কারনেই এই প্রতিরোধ শক্তিতে ফাটল দেখা দিলে , বা অতিরিক্ত এসিড নিঃসৃত হতে থাকলে পুরো ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায়, একেই বলে গ্যাস্ট্রিক।

গ্যাস্ট্রিক নিয়ে অনেকেই অনেক কিছু করেন ,বা বলেন , তবে আজকের এই এপিসোডে , আমি আপনাদের কিছু সাধারণ নিয়ম কানুন বলবো।এবং কিছু প্রাকৃতিক উপায়ে বলবো , যেগুলো মাধ্যমে আপনি ঘরোয়া পদ্ধতিতেই আপনার গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা অনেকটাই সমাধান করতে পারবেন। এখন আপনাকে কিছু সাধারণ নিয়ম কানুনের কথা বলা হবে যেগুলো গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা অনেকটাই কমিয়ে দেবে।

১। নির্দিষ্ট সময়ে খাদ্য গ্রহণ করুন) পাকস্থলী নির্ধারিত সময়ে এসিড তৈরি হয় এ সময় পেটে খাবার না পেলে সে নিজের দেয়ালেরই ক্ষতি করতে শুরু করে , একবারে অতিরিক্ত পরিমাণ খাবার না খেয়ে সারাদিনের খাবারটাকে! বেশ কয়েক ভাগে ভাগ করে নিন।

২। অনেকক্ষণ একটানা না খেয়ে থাকবেন না) মূল খাদ্য যেমন প্রাতরাশ বা মধ্যাহ্নভোজ কখনো একবারে বাদ দেবেন না। অনেকেই প্রাতরাশ না খেয়ে বাইরে চলে যান, অনেকে আবার খাদ্যনিয়ন্ত্রণের নামে নৈশ ভোজ না করেই শুয়ে পড়েন। এগুলো মোটেই ভাল অভ্যাস নয়।

৩। ঘুমানোর কমপক্ষে দুই ঘণ্টা আগে রাতের খাবার সেরে নিন) খাওয়ার পর বসে পত্রিকা বই পড়ুন অথবা টেলিভিশন দেখুন। ঘুমানোর সময় লক্ষ্য রাখুন মাথা শরীরের চেয়ে ৬ থেকে ৮ ইঞ্চি উপরে আছে কিনা , অনেক সময় শুয়ার সমস্যার কারণে পাকস্থলীর খাবারসহ অ্যাসিড উপরের দিকে ঠেলে আসে।

৪। ওজন কমান মেদভুঁড়ি নিয়ন্ত্রণ করুন) ধূমপান, তামাক, এবং মদ্যপান এড়িয়ে চলুন! অতিরিক্ত চা-কফি চকলেট তৈলাক্ত ভাজাপোড়া খাবার, বেশি মসলা ও তেল দিয়ে প্রস্তুত খাদ্য যথাসম্ভব এড়িয়ে চলাই ভাল। তবে তৈলাক্ত খাবার খাওয়ার আগে, বা পরে পানি খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। তৈলাক্ত খাবার খাওয়ার পরে অন্তত ৩০ মিনিট পরে ১ গ্লাস পানি পান করুন।

৫। মানসিক চাপ ও দুশ্চিন্তা ও অনেক সময় এ সমস্যা বাড়িয়ে দেয় ) তাই মানসিক চাপ সামলানোর চেষ্টা করুন। বাজারে পাওয়া যায় দেশে তৈরি সমস্ত জুস যথাসম্ভব বর্জন করুন।

এই ছিল কিছু সাধারণ নিয়ম কানুন! এবার আপনাদের সাথে কিছু প্রাকৃতিক উপায় শেয়ার করবো , যেগুলো আপনার গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা অনেকটাই কমিয়ে দিবে।

(১) – লবঙ্গ)

যদি আপনি গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় জর্জরিত হয়ে থাকেন , তবে লবঙ্গ হতে পারে আপনার সঠিক পথ্য, দুইটি লবঙ্গ মুখে নিয়ে চিবাতে থাকুন যেন স্বপ্নের ভিতরে যায়! দেখবেন এসিডিটি দূর হয়ে গেছে।

(২) জিরা) ১ চা চামচ জিরা নিয়ে ভেজে ফেলুন, এবার এটিকে এমন ভাবে গুঁড়া করুন, যেন পাউডার না হয়ে যায়, একটু ভাঙ্গা ভাঙ্গা থাকে। এই গুঁড়া টি এক গ্লাস পানিতে মিশিয়ে, প্রতিবার খাবারের সময় পান করুন, দেখবেন কেমন ম্যাজিকের মতো কাজ করে।

(৩) গুঁড় ) গুঁড় আপনার বুক জ্বালাপোড়া এবং এসিডিটি থেকে মুক্তি দিতে পারে , যখন বুক জ্বালাপোড়া করবে, সাথে সাথে একটুকরো গুঁড় মুখে নিয়ে রাখুন, যতক্ষণ না সম্পূর্ণ গলে যায়! তবে ডায়বেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে এটি নিষিদ্ধ।

(৪) মাঠা) দুধ এবং মাখন দিয়ে তৈরী মাঠা একসময় আমাদের দেশে খুবই জনপ্রিয় ছিল, এসিডিটি দূর করতে টনিকের মতো কাজ করে, যদি এর সাথে সামান্য গোলমরিচ গুঁড়া যোগ করেন।

(৫) পুদিনাপাতা) পুদিনা পাতার রস গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করতে বহুদিন ধরেই ব্যবহৃত হয়ে আসছে, প্রতিদিন পুদিনা পাতার রস বা পাতা চিবিয়ে খেলে এসিডিটি এবং বদহজম থেকে দূরে থাকতে পারবেন। 

(৬) তুলসীপাতা) হাজারো গুণে ভরা তুলসী পাতার কথা আপনারা সবাই জানেন ? এসিডিটি দূর করতেও এর ভূমিকা অনন্য! যখন গ্যাস্টিকের সমস্যা হবে। ৫ থেকে ৬ টি তুলসী পাতা চিবিয়ে খেলে দেখবেন এসিডিটি কমে গেছে। তুলসী পাতা, যে প্রতিদিন ব্লেন করে পানি দিয়ে খাবেন, তার এসিডিটি হওয়ার প্রবণতা অনেকটা কমে যাবে।

(৭) আদা ) আদা ও এমন একটি ভেষজ উপাদান যা আমাদের অনেক কাজে লাগে, প্রতিবার খাদ্য গ্রহণের ৩০ মিনিট আগে, ছোট এক টুকরো আদা খেলে দেখবেন আপনার গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা গায়েব হয়ে গেছে।

(৮) দুধ ) দুধের মধ্যে আছে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম, যা পাকস্থলীর এসিড কমাতে সাহায্য করে, রাতে এক গ্লাস দুধ ফ্রিজে রেখে দিয়ে পরদিন সকালে খালি পেটে সেই ঠান্ডা দুধটুকু খেলে সারাদিন এসিডিটি থেকে মুক্ত থাকা যাবে। তবে যাদের পেট দুধের প্রতি অতি সংবেদনশীল, এদের ক্ষেত্রে দুধ খেলে সমস্যা আরো বাড়তে পারে।

(৯) ভ্যানিলা আইসক্রিম ) আইসক্রিম খেতে আমরা সবাই পছন্দ করি, কিন্তু আপনি কি জানেন ভ্যানিলা আইসক্রিম শুধু আমাদের তৃপ্তি ই জগাই না, সাথে এসিডিটি দূর করতে কার্যকরী ভূমিকা রাখে। কি এটা শুনে আইসক্রিম খাওয়া আরো বাড়িয়ে দিলেন নাকি? তবে সাবধান আবার ঠান্ডা লাগিয়ে ফেলবেন না।

(১০) কাঁচা আমলকি) দুই থেকে চারটা চিবিয়ে দৈনিক দুইবার আহারের পর খাবেন, সাথে সাথে ফল পাবেন! বেশি খারাপ গ্যাস্ট্রিক হলে *কারমিনা* নিয়মিত একমাস খান।

গ্যাস্ট্রিক অনেক সময় বড় কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে, তাই প্রথম অবস্থাতেই এর সমাধান চিন্তা করুন। আর প্রাকৃতিক এই উপায়ে আপনি করতে পারেন এর প্রতিকার। এই ছিল আজকের মত, দেখা হচ্ছে পরবর্তী কোন এপিসোডে , সেই পর্যন্ত ভালো থাকুন ধন্যবাদ।

আরো দেখুন:

Google News