মুখরোচক খাবারের মধ্যে বাদাম হচ্ছে সবচেয়ে সেরা, বন্ধুদের সাথে খোলামেলা আড্ডার সময় ভাজা বাদাম না হলে তো হবেই না। কিন্তু আমরা দেখি বাদাম নাকি স্বাস্থ্যের অনেক উপকার করে, তাহলে আমরা যে হকার থেকে বাদাম কিনে খাই সেই বাদামিই কি? নাকি অন্য বাদাম? আর বাদাম আসলে তাহলে কত প্রকার?

আজকের এই পোস্টটিতে আলোচনা করবো কোন বাদাম আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী , বাদাম কত প্রকার, প্রতিদিন কত পরিমাণ বাদাম খেতে পারবেন, এছাড়া বাদাম আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য কখন খারাপ হতে পারে , কারা বাদাম খেতে পারবেন না। এসব নিয়ে বিস্তারিত তথ্য।

জানেন কি বাদাম কত প্রকার?  মূলত বাদাম অনেক প্রকার হয়ে থাকে, তবে সাধারণত ৪ প্রকার।

১. কাঠ বাদাম।

২. চিনাবাদাম।

৩. পেস্তা বাদাম।

৪. কাজু বাদাম।

এছাড়াও বাজারের অনেক রকমের বাদাম পাওয়া যায়, যা আলাদা আলাদা ভিটামিন ও প্রোটিন সমৃদ্ধ এবং তাদের স্বাদও ভিন্ন। যেমন আখরোট বাদাম ইত্যাদি. ইত্যাদি।

তবে আজকের এই পোস্টটিতে আমরা চার প্রকার বাদাম নিয়ে আলোচনা করবো। কোন বাদামের কি উপকার চলুন জেনে নিই।

১) কাঠবাদাম: প্রতি আউন্স কাঠবাদামে রয়েছে ১৬১ ক্যালরি ৫.৯ গ্রাম প্রোটিন। ১৩.৮ গ্রাম ফ্যাট। ক্যালোরি আমাদের দেহের শক্তি যোগায় এবং প্রোটিন দেহের বিকাশ করে। এছাড়া বাদামের ৩৭% ভিটামিন ই রয়েছে। দামের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় কাঠবাদাম চর্বিতে পূর্ণ একটি খাবার এবং এটি ওজন বাড়িয়ে দেয় বলে মনে করেন অনেকে। এই ধারণা সঠিক নয়: সত্য হচ্ছে কাঠবাদাম ওজন কমাতে সাহায্য করে , 

স্নাকস হিসাবে খাওয়ার জন্য অত্যন্ত চমৎকার একটি খাবার কাঠবাদাম এর গুনাগুন সম্পর্কে ধারণা না থাকায় অনেকেই আমাকে এড়িয়ে যাই। কাঠবাদাম এর মধ্যে রয়েছে ভিটামিন ই ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, সেলেনিয়াম, জিংক, আয়রন, ও ম্যাগনেসিয়াম , পুষ্টিগুণে ভরপুর এই বাদাম কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। হূদেরাগের ঝুঁকি কমায়, শ্বাসতন্ত্রের সমস্যা কমায় , রক্তস্বল্পতা দূর করে।

একটি চুল ও ত্বকের জন্য , বিশেষজ্ঞরা বলেন প্রতিদিন এক মুঠো কাঠবাদাম খেলে হার্টের জন্য ভালো কোলেস্টেরল কমায় শরীরের শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। মস্তিষ্কের জন্য ভালো ,হাড় ক্ষয় রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো, উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে। ক্লোন ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করা সহ এই উপকার গুলো পেতে সাহায্য করবে আপনাকে।

২) চিনা বাদামস: প্রতি আউন্স চিনাবাদামে ১৬১ ক্যালোরি, ৪.৬ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট, ৭.১ গ্রাম প্রোটিন, ১৩.৬ গ্রাম ফ্যাট রয়েছে। এই উপাদানগুলো আমাদের শরীরের ভালো রাখতে প্রয়োজন। চিনাবাদামে উপস্থিত আয়রন ৪.৬ মিলিগ্রাম, উজিং ৩.৩ মিলিগ্রাম যা আমাদের সুস্থ রাখতে সহায়ক। শরীরের মাত্রাধিক কোলেস্টেরল হূদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ , ওজন বৃদ্ধি ও ডায়াবেটিস এর মতো কঠিন রোগ সৃষ্টি করে। বাদামের অসাধারণ কার্যকরী ফ্যাট শরীর থেকে কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে। তাছাড়া এই বাদাম শরীরের চর্বি কমাতেও সাহায্য করে। প্রতিদিন এক মুঠো চিনা বাদাম খেতে পারেন শরীরে কোলেস্টেরল কমাতে।

রাতে ১০-১৫ টি বাদাম পানিতে ভিজিয়ে রেখে সকালে খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে, চিনাবাদামের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ডায়াবেটিস নির্মূল বিশেষভাবে কার্যকর , প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় একমুঠো বাদাম যুক্ত করে আপনি অতিরিক্ত ওজনের সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন। তাছাড়া এটি আপনার শরীরের শক্তি বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। চীনা বাদামে রয়েছে আর একটি বিশেষ যা মস্তিষ্কের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করে। তাই প্রতিদিন চিনা বাদাম‌ বা এর মাখন খাবেন। যাতে করে আপনি স্বয়ংক্রিয় মস্তিষ্ক পেতে পারেন, শরীরের সঠিক পরিমাণ পুষ্টি না থাকলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়, চিনাবাদামের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরে কঠিন রোগে বাসা বাঁধতে বাধা দান করে, তাই প্রতিদিন চিনা বাদাম খেয়ে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ান। চিনাবাদামের সকল স্বাস্থ্য উপকারিতা পেতে প্রতিদিন অবশ্যই একমুঠো চিনা বাদাম খেতে পারেন। স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের পেতে আপনাকে সাহায্য করবে চিনা বাদাম।

৩)পেস্তা বাদাম:  প্রতি আউন্স পেস্তা বাদামে ১৫৯ ক্যালোরি, ৭.৮ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট ৫.৭ গ্রাম প্রোটিন, ২.৯ গ্রাম ফাইবার, ১২ দশমিক ৪৯ গ্রাম ফ্যাট , ভিটামিন b ৬-২৪% আরটিআই থাকে। পেস্তা বাদামের রয়েছে নানা পুষ্টিগুণ যে কারণে ডায়াটে পেস্তা রাখতে বলেন  নিউটিশিয়ানরা। পেস্তা বাদাম ওজন কমাতে সাহায্য করে।

জেনে নিন পেস্তা বাদামের কিছু স্বাস্থ্যগুণ:) ক্যালোরি ও প্রোটিন-: পেস্তা বাদামে ক্যালরির পরিমাণ যেমন কম, তেমনি এই বাদাম হাইপ্রোটিনসমৃদ্ধ। অন্যান্য বাদামে তুলনায় পেস্তা বাদামে অ্যামাইনো এসিডের পরিমাণ বেশি, তাছাড়া পেস্তা বাদামের মধ্যে থাকে দুটি প্রয়োজনীয়তা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট।

অন্যান্য বাদামের তুলনায় পেস্তা বাদামে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর মাত্রা বেশি থাকায় , দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতেও উপকারী পেস্তা।

পেস্তা বাদামের পুষ্টিগুণ:

ফাইবার ,প্রোটিন, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট , ভিটামিন বি-৬ ও পটাশিয়াম থাকার কারণে পেস্তা পুষ্টিগুণে ভরপুর এক খাবার। এনার্জি জোগানোর পাশাপাশি যেকোনো বাদাম ওজন বসে রাখতে ও সাহায্য করে, পেস্তার রয়েছে এই গুণ পেস্তা খাদ্যনালীতে উপকারী ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধিতে সাহায্য করে, ফলে পেট পরিষ্কার থাকে।

রক্তনালী:)

পেস্তা রক্তনালীর এন্ডোথেলিয়াম এর কার্যকারিতা বজায় রাখতে সাহায্য করে, প্রতিদিন ডায়াটে পেস্তা থাকলে তার রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে , পেস্তা রক্তে গুড কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়াতে ও এল টি এল bad কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে।

৪) কাজুবাদাম:) 

কাজু অত্যন্ত সুস্বাদু একটি বাদাম , কাজু বাদাম সাধারণত ভেজে খাওয়া হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে প্রতি ১০০ গ্রাম কাজু বাদামে ৩০.১৯ গ্রাম শর্করা ১৮.২২ গ্রাম আমেস, ৪৩ দশমিক ৮৫ গ্রাম চর্বি থাকে। বাজারে বিভিন্ন ধরনের কাজু বাদাম পাওয়া যায় যেমন- মসলাযুক্ত। কাজুবাদামে বিভিন্ন ভিটামিন ও ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, পটাশিয়াম, খনিজ উপাদান রয়েছে। যেহেতু কাজু তে উচ্চমাত্রার ক্যালোরি থাকে, তাই দৈনিক পাঁচ দশটা কাজু বাদাম খাওয়ায় যথেষ্ট। কাজু বাদামে প্রচুর স্বাস্থ্য উপকারিতা আছে এটি দুর্বল ব্যক্তিকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে, এছাড়া কাজুবাদামে আরো অনেক স্বাস্থ্য গুণ রয়েছে।

জেনে নিন সে সমস্ত স্বাস্থ্যগুণ:)

১. কাজুবাদাম ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার আমাদের শরীরে দৈনিক ৩০০ থেকে ৭৫০ গ্রাম ম্যাগনেসিয়াম প্রয়োজন। আর এটা পূরণ করে এ বাদাম। কাজু মাংসপেশি ও স্নায়ুর সঠিক কাজ ও হাড় মজবুত করতে সাহায্য করে.

২. কাজুবাদামে কোলেস্টেরল থাকে না: এবং এতে ভালো ফ্যাট আছে, খারাপ কোলেস্টেরল এলডিএলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে কাজু বাদাম। তাছাড়া কাজু তে আলিফ এসিড থাকে যা হার্টের জন্য অনেক উপকারী।

৩. কাজুতে, সোডিয়াম কম এবং পটাশিয়াম বেশি থাকে যার ফলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে।

৪. কাজুবাদামে সেলেনিয়াম ও ভিটামিন ( ই) থাকে কাজু বাদামে থাকা জিংক ইনফেকশনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে আপনাকে সুস্থ রাখে। কাজু ফ্রিরেডিকেল প্রতিরোধ করে যার ফলে ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।

৫. কাজু তে উচ্চমাত্রার কপার থাকে তাই এনজাইমের কাজ এ হরমোনের  উৎপাদনে এবং মস্তিষ্কের কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, এছাড়াও লাল রক্ত কণিকার উৎপাদনেও সাহায্য করে। এক কথায় এনিমিয়া প্রতিরোধ করে।

নিয়মিত বাদাম কতটা পরিমাণে আপনি খাবেন? ২৫ থেকে ৩৫ গ্রামের মতো নিয়মিত খাওয়া উচিত। এবার জানি বাদামের সাইড ইফেক্ট সম্পর্কে। আমরা সকলেই জানি যে শুকনো ফল গুলি বিভিন্ন ধরনের পুষ্টিতে সমৃদ্ধ পাশাপাশি এতে প্রচুর ফাইবার থাকে। যদিও হজমে ফাইবারের প্রয়োজন হয় , তবে যখন নির্দিষ্ট পরিমাণ না খেয়ে অতিরিক্ত পরিমাণে খায় তখন আমাদের শরীরের কিছু সমস্যা সৃষ্টি হয়।

যেমন- পেট ফোলা ভাব ,পেটে গ্যাস, ডায়রিয়া সমস্যা, কিছু কিছু বাদামে অ্যালার্জির সমস্যা হয়, স্বাস্থ্য খারাপ হতে পারে। যাদের অ্যালার্জি ও মাইগ্রেনের সমস্যা আছে তাদের কাজুবাদাম না খাওয়াই ভালো।

আরো দেখুন:

Google News