পৃথিবীতে নানা দুঃখ ও দুর্দশা দেখে কিছু কিছু মানুষের মনে এই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন আসে। আল্লাহ কি খারাপ কিছু সৃষ্টি করেন, আর রহমান! আর রহিম! আর রব্বুল করিম এর জন্য কি মন্দ কিছু সৃষ্টি করা শোভা পাই?

তাহলে তিনি অকল্যাণকে থামিয়ে দিয়ে, আমাদেরকে তা থেকে রহম করলেন না কেন? তিনি আল গনি, যিনি অমুখাপেক্ষী ধনী, যার হাতেই সবকিছু। এর উত্তর এড়িয়ে চাওয়ার উপায় নেই।

আল্লাহ অবশ্যই খারাপ কিছু সৃষ্টি করেন না। এখানে আমি খারাপ বলতে এমন কিছু বোঝাচ্ছি- যা মৌলিকভাবেই খারাপ। তিনি হলেন সকল কল্যাণ ও বরকতের উৎস! যেমনটা আল্লাহতায়ালা বলেন_ (আরবি)

বাংলা অর্থ:- যদি তোমরা আল্লাহর নিয়ামত সমূহ গণনা করতে চাও তাহলে তাতে সক্ষম হবে না।

এবং তিনি বলেন_(আরবি)

বাংলা অর্থ:- বলোঃ হে আল্লাহ! বিশ্ব- জাহানের মালিক! আপনি যাকে চান রাষ্ট্র ক্ষমতা দান করেন এবং যার থেকে চান রাষ্ট্র ক্ষমতা ছিনিয়ে নেন। যাকে চান মর্যাদা ও ইজ্জত দান করেন এবং যাকে চান লাঞ্ছিত ও হেয় করেন। কল্যাণ আপনার হাতেই নিহিত। নিঃসন্দেহে আপনি সবকিছুর উপর শক্তিশালী।

এবং নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার রবের কাছে দোয়া করে বলেন_(আরবি)

বাংলা অর্থ:- যাবতীয় কল্যাণ আপনার হাতে নিহিত, অকল্যাণ আপনার দিকে সম্পৃক্ত নয় ।

এ জগতে যা কিছু অকল্যাণকর আমরা দেখতে পাই, তা আংশিক, আপেক্ষিক অকল্যাণ। যা পরিপূর্ণ মৌলিক ও সার্বিক কল্যাণ এর বিপরীত। এবং এই অকল্যাণ, কল্যাণের জন্যই আবশ্যক। মানবজাতির সৃষ্টির দিকে তাকিয়ে দেখুন, এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই, যে মানুষ সৃষ্টির মাঝে মৌলিকভাবে কল্যাণ রয়েছে।

তাকে বুদ্ধি, ইচ্ছাশক্তি এবং ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে যা তাকে এই পৃথিবীর খলিফা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। এবং এর মধ্যে কল্যাণ রয়েছে, তাকে নীতিবোধ ও আমানত দান করার মাধ্যমে, সম্মানিত করা হয়েছে।

যা আসমান, জমিন ও পর্বত মালাকে প্রস্তাব করা হলে তারা উদ্বিগ্ন হয়ে সে দায়িত্ব নিতে রাজি হয়নি। এবং তার মাঝেও কল্যাণ রয়েছে, তার হেদায়েত দুটি পথ প্রদর্শন করে, সৎকর্ম ও অসৎ কর্মের প্রতি নাফসের যে ইলহাম তার মাঝেও কল্যাণ রয়েছে।

তার কাছে নবী-রাসূল পাঠানো হয়েছে, কিতাব নাজিল করা হয়েছে, মানুষকে নানা অজুহাতে ক্ষমা করে দেওয়া হয়েছে। এবং তার মাঝেও কল্যাণ রয়েছে, আবার তার প্রতি প্রতিটি বাহ্যিক ও আধ্যাত্মিক বিষয়ে হিসাব নেওয়ার মাঝেও, কল্যাণ রয়েছে।

যে এই কল্যাণের ব্যাপারে সন্দেহান, সে তার রবকে অবিশ্বাস করেছে, তার রাসূলগণকে মিথ্যাবাদী দাবি করেছে, তার আমলসমূহে ব্যর্থ হয়েছে, তার রবের শাস্তি পাওয়ার যোগ্য হয়েছে, সেই রবের যিনি কারো সাথে অন্যায় বা অবিচার করেন না বরং প্রতিটি নাফছকে তিনি তার প্রাপ্য প্রতিদান দেন।

__(আরবি)

বাংলা অর্থ:- তারপর যে অতি অল্প পরিমাণ ভালো কাজ করবে সে তা দেখবে এবং যে অতি অল্প পরিমাণ খারাপ কাজ করবে সে তা দেখবে।

এটা সেই অকল্যাণ যা মানুষের কাছে এসেছে তার মন্দ কাজের ফলস্বরূপ। এই অকল্যাণ হলো, যা মানুষ তার খারাপ কাজের মাধ্যমে ডেকে এনেছে। আল্লাহ তার জন্য যেসব কল্যাণ প্রস্তুত করে রেখেছিলেন, তা থেকে সে উপকৃত হতে পারেনি।

আল্লাহ তাআলা তার বান্দাদের জন্য বৃষ্টি পাঠান এবং তাদের জন্য প্রবাহমান নদী তৈরি করেন। কখনো কখনো সে বৃষ্টির কারণে বন্যা হতে পারে, যা দ্বারা কিছু মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। কিন্তু নির্দিষ্ট কিছু মানুষের কখনো কখনো সাময়িক অসুবিধা হলেও এই বৃষ্টির ফলে কোটি কোটি মানুষ তাদের জীবন উপভোগ করতে পারে।

এবং একে আল্লাহ তায়ালা এক বিরাট নিয়ামত হিসেবে গণ্য করেন। এ ব্যাপারে মানুষ বলে থাকে,_(আরবি)

বাংলা অর্থ:- অর্থাৎ কারো পৌষ মাস, কারো সর্বনাশ!

কিছু সুবিধা অর্জন এবং অন্যের অসুবিধার মাঝে ব্যালেন্স করার লক্ষ্যে, মানুষ পরিকল্পিত ভাবেও এমনটা করে থাকে।

আল্লাহ ছাড়া আর কোন মাবুদ নেই

যেমন ধরুন মিশরে ‘আচ্ছাদুল আলী’ বা উঁচু বাঁদ নির্মাণ করা হয়েছে। এটা করা হয়েছে পানি জমিয়ে রাখার উদ্দেশ্যে। যেন পানিগুলো সাগরে ভেসে গিয়ে অপচয় না হয়। এই বাদ নির্মাণের ফলে, কিছু গ্রাম সম্পূর্ণভাবে ডুবে গিয়েছে।

মানুষের ক্ষতি হয়েছে, এবং সরকার তাদেরকে ক্ষতিপূরণ দিয়ে ও অন্য অঞ্চলে স্থানান্তর করেছে। আমি একবার জুয়াডান আম্মান শহরে গেলাম, একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে লেকচার দেওয়ার জন্য। হঠাৎ বিপুল পরিমাণে বরফ পড়তে লাগলো, এবং রাস্তায় হাজারো গাড়ি আটকে গেলো।

আমরা মহা বিপদে পড়লাম। রাত হয়ে গেল, এবং আমরা ভয় পেলাম যে গাড়ির তেল শেষ হয়ে গেলে হিটিং আর কাজ করবে না। এবং আমরা ঠান্ডায় মারা যাবো। প্রায় টানা ৮ ঘণ্টা পর, আর্মি, সিভিল ডিফেন্স, পুলিশ এবং অন্যান্যরা মিলে উপস্থিত হলো।

এবং বরফ সরানোর কাজ আরম্ভ করল। এবং আমরা আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলাম, আমাদের রক্ষা করার জন্য। অথচ পরের দিন সকালে, আমি দেখতে পেলাম মানুষ এই বরফ পড়ার জন্যে একে অপরকে অভিনন্দন জানাচ্ছে!

কারণ এই বরফ জমিনকে এমন সব কীটপতঙ্গ থেকে মুক্ত করে, যা কিনা গাছ পালার জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। এবং সেই সাথে মাটিতে পানির সাপ্লাই বেড়ে যায়, আমি আরো দেখলাম ছোট ছোট বাচ্চারা বরফের মধ্যে খেলা করছে, বরফ দিয়ে মজা করে নানা জিনিস বানাচ্ছে আর সুড়ে বেড়াচ্ছে।

আমরা বন্দি অবস্থায় যেটাকে আজাব মনে করেছিলাম, সেটাই পুরো কমিউনিটির জন্য একটি আশীর্বাদ হয়ে উঠল। অতএব একজন মুমিন নিজেকে নিয়ে সন্তুষ্ট থাকে। অর্থাৎ তার অস্তিত্ব এবং এ মহাজগতে তার অবস্থান নিয়ে সন্তুষ্ট থাকে।

কারণ সে জানে, যেকোনো হারিয়ে যাওয়া পরমানু বা নিঝক কোনো অবহেলিত সংখ্যা নয়। সে কোন তুচ্ছ বিষয় নয়, বরং সে আল্লাহর নূরের ঝলক, তার রুহের ফুক, তার এই পৃথিবীর খলিফা।

একজন মুমিন এ ব্যাপারে সম্পূর্ণরূপে নিশ্চিত, তার জন্য আল্লাহ যে পরিকল্পনা করে রেখেছেন , তা তার নিজের পরিকল্পনার চেয়েও উত্তম। তার প্রতি আল্লাহর যে মমতা সেটা তার নিজের পিতা-মাতার মমতার চেয়েও প্রবল!

তার হাতে কেবলই কল্যাণ, কোনো অকল্যাণ তার সাথে সম্পৃক্ত নয়। এবং মানুষ যেটাকে খারাপ মনে করে, সেটা মৌলিকভাবে খারাপ নয়। এবং সেটাকে যদি খারাপ বলে আখ্যায়িত করতেই হয়, তাহলে সেটা একটি নির্দিষ্ট খারাপ দিক বা আংশিক অকল্যাণ,

যাকে ঘিরে রয়েছে সার্বজনীন উপকারিতা। অস্তিত্বের বিভিন্ন অংশের একে অপরের প্রতি পারস্পরিক নির্ভরতার কারণে কিছু আংশিক অকল্যাণের ও প্রয়োজন আছে। এ ব্যাপারে ওস্তাদ লাক্কদ বলেন_ যারা এই পারস্পরিক নির্ভরতার ব্যাপারটি মানেন, তারা বোঝেন যে অকল্যাণ মৌলিকভাবে কল্যাণের বিরোধিতা করে না।

বরং এটা কল্যাণের বাস্তবায়নের জন্য এক অবিচ্ছেদ্য শর্ত, যেমন- কষ্ট ছাড়া ছবর এ ধরনের গুণের কোন অর্থই থাকে না। এ কথাটি আমরা উপলব্ধি করতে পারি আমাদের ইন্দ্রিয় দ্বারা, যেমনটা পারি আমাদের নাফস এবং আকল দ্বারা।

ক্ষুধার কষ্ট ছাড়া পেট ভরে খাওয়ার আনন্দ অনুভব করা যায় না, তৃষ্ণার আকুলতা ছাড়া পানির তৃপ্তি অনুভব করা যায় না, মনোরম দৃশ্য আমাদের মুক্ত করবে না যদি না আমরা অসুন্দর দৃশ্য দেখে থাকি। এটাই আমাদের মহাবিশ্ব, এই মহাবিশ্ব তার প্রতিটি অংশের উপর নির্ভরশীল।

কেউ যদি এমন মহাবিশ্ব কল্পনা করে যেখানে মন্দ কিছু ঘটে না, সে বিভ্রান্ত! এই মন্দ কল্যাণের জন্যই অপরিহার্য। মহান আল্লাহ! যার রহমত সব কিছুকে ঘিরে রেখেছে, মৌলিকভাবে মন্দ কিছু তিনি সৃষ্টি করেন না।

কল্যাণের জন্য যতটুকু আংশিক অকল্যাণ আবশ্যক ততটুকু ব্যতীত এক অপরিপুরক অকল্যাণ, যে অকল্যানকে চারিপাশ থেকে কল্যাণ অভিভূত করেছে। যা কিছু আল্লাহ তাআলা থেকে আসে তাইই মঙ্গলময়। অতএব একজন মুমিনের জন্য এটাই শোভনীয় যে, সে তার রবকে ডাকবে এবং তার সাথে কোন মন্দকে সম্পৃক্ত করবে না।

তাই সাইয়েদেনা ইব্রাহিম আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন- (আরবি)

বাংলা অর্থ:- যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন, তারপর তিনি আমাকে পথ দেখিয়েছেন! তিনি আমাকে খাওয়ান ও পান করান এবং রোগাক্রান্ত হলে তিনিই আমাকে রোগ মুক্ত করেন।

কিন্তু তিনি বলেননি- (আরবি)

বাংলা অর্থ:- আল্লাহ হচ্ছেন তিনি! যিনি আমাকে অসুস্থ করে এবং এরপর সুস্থ করে তোলেন।

এবং এমনটা না বলাটাই আল্লাহর সাথে সঠিক আদব।

আল্লাহ ছাড়া আর কোন মাবুদ নেই নিশ্চয়ই হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর প্রেরিত রাসূল

সবকিছুই আল্লাহর হুকুমে হয়, কিন্তু অনেক রোগ বালাই হয় মানুষের সিদ্ধান্তগুলোর কারণে। আল্লাহর নির্ধারিত পথ অনুসরণ না করার ফলে। জীবনের প্রতিকূলতা মানুষকে শক্তিশালী করে। মানুষটা থেকে শেখে, অথচ যারা সোনার চামচ নিয়ে বেড়ে ওঠে, যারা প্রাচুর্যের মাঝে ডুবে থাকে, হয়তো সারা জীবন কিছু শিখতে পারে না।

বরং যারা ছোটবেলা থেকেই কষ্টের মধ্য দিয়ে বড় হয় তারাই সবচেয়ে গভীরভাবে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে।

_ইমাম ইবনে তাইনি রহিমাতুল্লা বলেন, আল্লাহর এমন কোনো নাম নেই যার মধ্যে কোনো অকল্যাণ রয়েছে। কিন্তু তার কিছু নামের প্রভাবে কারো কারো জন্য অকল্যাণ থাকতে পারে।

যেমন আল্লাহ পবিত্র কুরআনে বলেন-(আরবি)

বাংলা অর্থ:- হে নবী! আমার বান্দাদেরকে জানিয়ে দাও যে, আমি বড়ই ক্ষমাশীল ও করুণাময়। কিন্তু এ সঙ্গে আমার আজাবও ভয়ংকর যন্ত্রণাদায়ক।

_(আরবি)

বাংলা অর্থ:- নিঃসন্দেহে তোমাদের রব দ্রুত শাস্তি দান কারী এবং নিশ্চিতভাবেই তিনি ক্ষমাশীল ও করুণাময়ও।

_(আরবি)

বাংলা অর্থ:- জেনে রাখো, আল্লাহ শাস্তি দানের ব্যাপারে যেমন কঠোর তেমনি তিনি ক্ষমাশীল করুণাময়ও।

_(আরবি)

বাংলা অর্থ:- আসলে তোমার রবের পাকড়াও বড় শক্ত। তিনিই প্রথমবার সৃষ্টি করেন আবার তিনিই দ্বিতীয় বার সৃষ্টি করবেন। তিনি ক্ষমাশীল, প্রেমময়।

এই আয়াতগুলোতে আল্লাহ তাআলা পরিষ্কার করে দিয়েছেন, যে তার পাকড়াও অত্যন্ত কঠোর, কিন্তু সেই সাথে তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল, অতিরিক্ত করুণাময়। এরপর  ইবনে তাইনি রহমতুল্লাহ আলাইহি বলেন- এখানে এমন বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে, যা এই ব্যাপারটিকে ভালোভাবে বোঝার জন্য জরুরী।

আদম সন্তানের রুহ এখনো এই বিষয় দ্বারা ভীষণ রকম বিচলিত। আল্লাহর হেকমত ও রহমতের ফলে, জ্ঞান ও ঈমান তার কাছে ধরা দিয়েছে, মুগ্ধও করেছে, যা আল্লাহ তার পবিত্র গ্রন্থে যা বলেছেন একটা প্রমাণ করে- (আরবি)

বাংলা অর্থ:-অচিরেই আমি এদেরকে সর্বত্র আমার নিদর্শন সমূহ দেখাবো এবং তাদের নিজেদের মধ্যেও। যাতে এদের কাছে এ কথা পরিষ্কার হয়ে যায়, যে এ কোরআন যথার্থ সত্য।

এবং নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সহি হাদিসে উল্লেখ করেন- (আরবি)

বাংলা অর্থ:- একজন মা তার সন্তানের প্রতি যতটুকু যত্নশীল আল্লাহ তার বান্দার প্রতি তার চেয়েও বেশি রহমতশীল।

এবং সহি হায়নি উল্লেখিত হাদিসে_সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন- 

আল্লাহ তায়ালা রহমত সৃষ্টির দিন ১০০ টি রহমত সৃষ্টি করেছেন। ৯৯ টি রহমত তিনি তার কাছে রেখে দিয়েছেন এবং একটি রহমত সমস্ত সৃষ্টির মধ্যে ছেড়ে দিয়েছে। এই একটি রহমত দ্বারা সৃষ্টি জগতের প্রতিটি সৃষ্টি একে অপরের সাথে সহানুভূতিশীল হয়।

এমনকি একটি পশু তার পায়ের ক্ষুর সরিয়ে নেয় যেন বাচ্চা পশু আঘাত না পায়। এবং তিনি নিজের জন্য ৯৯ টি রহমত রেখে দিয়েছেন, কেয়ামতের দিন তিনি সেই রহমত দ্বারা তার বান্দাদের ব্যাপারে ফয়সালা করবেন।

হযরতুল ইসলাম ইমামুল গাজালি রহমতুল্লাহ এই প্রশ্ন সামনে নিয়ে সে নিজেই এর উত্তর দেন, তিনি বলেন, হয়তো আপনি বলবেন আল্লাহ তায়ালার আর রহিম ও আর হামুর রাহিমীন হওয়ার অর্থ আসলে কি?

যিনি রহমশীল তিনি কোন মানুষকে আহত হতে বা বিপদে পড়তে দেখলে, রোগাক্রান্ত হতে দেখলে অবশ্যই তার সমস্যা দূরভিত করার জন্য অগ্রসর হয়। অথচ আমাদের মহান রব প্রতিটি বিপর্যয়, দারিদ্র, দুর্দশা, রোগ বালাই থেকে দেওয়ার ক্ষমতা রাখা সত্ত্বেও তার বান্দাদের এই সবকিছু দ্বারা পরীক্ষিত হতে দেন।

নিশ্চয়ই আল্লাহ আমাদের রব এবং হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম আমাদের শেষ নবী

কেনো? একটি ছোট শিশুর মা হয়তো তার প্রতি মমতা থেকে, তাকে হেজামা করা থেকে বিরত রাখতে চান। হিজামা বা কাপিং থেরাপি হলো এক ধরনের চিকিৎসা, যা করার সময় সামান্য ব্যাথা লাগতে পারে, এবং এর নানা শারীরিক উপকারিতা পাওয়া যায়।

এবং নবীর করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও হিজামা করাতেন। এই শিশুর বাবা যদি তার মায়ের ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোরপূর্বক তার ছেলেকে হিজামা করান, জাহেলির লোকেরা বলবে শিশুটির প্রতি তার মাই বেশি দরদী, কিন্তু বুদ্ধিমান ব্যক্তি উপলব্ধি করবে তার বাবা তার সন্তানকে জোর পূর্বক হিজামা করার মাধ্যমেই

তার মমতার পরিপূর্ণ প্রকাশ পায়। অতি সামান্য অস্বস্তির বিনিময়ে যদি অনেক উপকার লাভ করা যায়, তাহলে তা তার জন্য মন্দ ছিল না, বরং তা ছিল কল্যাণকর। আর রহিম! নিঃসন্দেহে তার বান্দাদের ভালো চান।

গোটা অস্থিতে এমন কোন অকল্যাণ নেই, যার গভীরে কোন না কোন কল্যাণ লুকিয়ে থাকে না। একটি গুরুতর রোগাক্রান্ত হাত কেটে ফেলা আপাতুর দৃষ্টিতে কষ্টকর মনে হলেও এর মধ্যে উপকার রয়েছে।

এর মাধ্যমে গোটা শরীর নিরাপদ থাকছে। যদি হাত কাটা দেখে বিরত থাকা হতো, পুরা শরীরটাই ধ্বংস হয়ে যেত। সে অকল্যাণ আরো গুরুতর হত। শরীরকে নিরাপদ রাখার উদ্দেশ্যে হাত কেটে ফেলা হলো এমন এক কষ্ট যার মধ্যে কল্যাণ রয়েছে।

নিরাপত্তা হলো মৌলিকভাবে কল্যাণময়! যখন এই নিরাপত্তা অর্জন করার পথ হয়ে যায় হাত কেটে ফেলা। এখানে হাত কেটে ফেলার উদ্দেশ্য হলো নিরাপত্তা অর্জন, এখানে নিরাপত্তায় মৌলিক উদ্দেশ্য।

ইমামুল গাজালি বলেন- ১. মৌলিক উদ্দেশ্য। ২. আনুষাঙ্গিক উদ্দেশ্য।

-(আরবি)

বাংলা অর্থ:- নিশ্চয়ই আমার রহমত আমার রাগ থেকে অগ্রগামী হয়েছে।

তার রাগ হল তার অকল্যান করতে চাওয়া। অতএব অকল্যাণ তার ইচ্ছায় হয়। আর তার রহমত হল, তার কল্যান করতে চাওয়া। কিন্তু যেহেতু তিনি কল্যাণ করতে চান, উল্লেখ ভাবে কল্যাণেরই কারণে, কিন্তু অকল্যাণ করতে চান মৌলিকভাবে অকল্যাণের জন্য নয়।

বরং এই কারণে যে অকল্যাণের মাঝেও কোনো অকল্যাণ রয়েছে। তবে আমরা বলতে পারি মূলত কল্যাণই সম্পূর্ণ হচ্ছে। তবে সাথে আনুষঙ্গিকভাবে কিছু অকল্যাণ ও সম্পন্ন হয়েছে। এবং দুটোই হয়েছে আল্লাহর কদা অনুযায়ী। তারমানে এখানে রহমতের পরিপন্থী কিছুই ঘটেনি।

এখন যদি আপনার সাথে এমন কোনো অকল্যাণ ঘটে, যার মধ্যে আপনি কোনো কল্যাণ দেখেন না, অথবা আপনি ভেবে দেখলেন যে কল্যাণ হাসিল হচ্ছে সে আনুষাঙ্গিক অকল্যাণ ছাড়াও হাসিল হতে পারতো! তবে নিজেকে প্রশ্ন করুন, যে এ দুটি ভাবনার ক্ষেত্রে আপনার আকেল অসম্পূর্ণ কিনা!

-আজকের মত বিদায় নিচ্ছি আমি ঈশান চৌধুরী_আবার দেখা হবে পরবর্তী নতুন কোনো এপিসোডে, ইনশাআল্লাহ! ততক্ষণ পর্যন্ত ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন_আসসালামু আলাইকুম! আল্লাহ হাফেজ!..

আরো দেখুন:

Google News