একসময় যোগাযোগের অন্যতম প্রধান মাধ্যম ছিল চিঠি। দেশ হোক বা বিদেশ, কারও সাথে যোগাযোগ করতে হলে হলে মানুষ চিঠি পত্রের উপর ভরসা করত। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় ও বিজ্ঞানের অভাবনীয় উন্নতিতে ও কল্যাণে মানুষ আজ যোগাযোগের অতি সহজ মাধ্যম হাতে পেয়েছে। টেলিফোন, মোবাইল ও ইন্টারনেটের আবিস্কার যোগাযোগ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন ঘটিয়েছে।

আগে কারও নিকটে কোনো খবর দিতে হলে দিনের পর দিন অপেক্ষা করা লাগত। আর এখন মুহূর্তেই যে কারও সাথে যোগাযোগ করা যায়। বিশ্বের যে কোনো প্রান্তে অবস্থানরত আপন জনের সাথে কথা ও দেখা করা যায় মুহূর্তেই। যখন প্রয়োজন তখনি যোগাযোগ করা যায় ইন্টারনেটের এই যুগে। আরও দেখুনঃ বিজয় দিবসের সংক্ষিপ্ত বক্তৃতা | ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের সংক্ষিপ্ত বক্তব্য

তাই এখন চিঠি পত্রের ব্যবহার সংকোচিত হয়ে পড়েছে। মানুষ এখন চিঠি পত্র লেখায় অভ্যস্ত নয়। তবুও কিছু অফিসিয়াল কাজে, সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে ও সংবাদপত্রে কোনো কিছু ছাপানোর আবেদনের ক্ষেত্রে চিঠি লেখার প্রচলন দেখা যায়। 

প্রেরক প্রাপক লেখার নিয়ম

প্রেরক প্রাপক লেখার নিয়ম

আমরা মোবাইল ও ই-মেইলে যোগাযোগ করলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে চিঠি লেখার প্রয়োজন দেখা দেয়। চিঠি লেখার তেমন প্রচলন না থাকায় অনেকেই কিভাবে চিঠির খামে প্রেরক ও প্রাপকের ঠিকানা লিখতে হয় তা বুঝতে পারেনা অথবা ভুলভাবে লিখে রাখে। তাদের সমস্যার কথা চিন্তা করেই আমরা আজ আলোচনা করব কিভেবে চিঠির খামে আপনি শুদ্ধভাবে প্রেরক ও প্রাপকের ঠিকানা লিখবেন। তাই চিঠির খামে ঠিকানা লিখার সঠিক নিয়ম জানতে আমাদের এই লেখাটি সম্পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে পড়ুন। 

প্রেরকের ঠিকানা লেখার নিয়ম

অনেকের মধ্যেই এই ধারণা কাজ করে যে, চিঠির খামে প্রেরকের ঠিকানা না লিখলেও চলে বা লেখার তেমন গুরুত্ব নাই। কিন্তু তাদের এই ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। প্রাপকের ঠিকানার মত প্রেরকের ঠিকানা লিখাও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আরও দেখুনঃ বিতর্ক প্রতিযোগিতার বিষয়

প্রাপকের ঠিকানা খুঁজে না পেলে বা কোনো কারণে চিঠি ফেরত আসলে তখন পোস্ট অফিস থেকে তা প্রেরকের ঠিকানায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তাই চিঠিতে প্রেরকের ঠিকানা লিখা খুবই প্রয়োজনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ। 

প্রেরকের ঠিকানা লেখার সময় আমরা অনেকেই ভুল করে থাকি। তাই আসুন আমরা জেনে নিই প্রেরকের ঠিকানা লেখার সঠিক নিয়ম। 

চিঠির খামের এক পাশে বন্ধ ও অন্য পাশে খোলা থাকে। খোলা অংশকে সাধারণত ডান পাশ ও বন্ধ দিকটা বাম পাশ ধরে নিতে হয়। প্রেরকের ঠিকানা চিঠির খামের বাম পাশেই লিখতে হয়। অর্থাৎ সবার আগে প্রেরকের ঠিকানা লিখতে হয়। খামের বাম পাশের অংশটুকু প্রেরকের ঠিকানা লেখার জন্যই নির্ধারিত থাকে।

অনেকে খামের মুখ বা খোলা অংশ কোন দিকে থাকবে তা বুঝতে পারে না। ফলে খামের ডান পাশ ও বাম পাশ চিহ্নিত করতে ভুল হয়ে যায়। তাই মনে রাখতে হবে খামের খোলা অংশ ডান পাশে থাকবে। আর বাম পাশে প্রেরকের ঠিকানা লিখতে হবে। আপনাদের সুবিধার জন্য নিচে প্রেরকের ঠিকানা লিখার একটা নমুনা দেখানো হলো।

চিঠির বাম পাশ থেকে লিখতে হবে,

প্রেরক,

  • নামঃ                        যিনি চিঠি লিখছেন বা যার পক্ষে লেখা হচ্ছে সেই ব্যক্তির নাম
  • অভিভাবকের নামঃ  ব্যক্তির পিতা বা বৈধ অভিভাবকের না
  • গ্রামঃ                      ব্যক্তির গ্রামের/মহল্লার নাম
  • ডাকঘরঃ                 ব্যক্তির ডাকঘরের নাম
  • উপজেলাঃ              ব্যক্তির উপজেলার নাম
  • জেলাঃ                    ব্যক্তির জেলার নাম
  • মোবাইল নংঃ          ব্যক্তির মোবাইল নম্বর

প্রাপকের ঠিকানা লেখার নিয়ম

চিঠির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো প্রাপকের ঠিকানা। কারণ আপনি যদি সঠিক ভাবে প্রাপকের ঠিকানা  লিখতে না পারেন তবে চিঠি গন্তব্যে পৌছানো কোনো ভাবেই সম্ভব নয়। অনেকেই প্রেরকেই জায়গায় প্রাপকের ঠিকানা লিখে রাখেন। ফলে চিঠি প্রাপকের হাতে পৌছায় না। আরও দেখুনঃ বিতর্ক প্রতিযোগিতার উপকারিতা

প্রাপকের ঠিকানা লিখতে হবে খামের ডান দিকে। বাম পাশে প্রেরকের ঠিকানা লেখার পর খামের মাঝখানে একটি বা তিনটি দাগ দিয়ে ডান পাশে প্রাপকের ঠিকানা লিখতে হয়। খুব সতর্কতার সাথে প্রাপকের ঠিকানা লেখা উচিত। সামান্য ভুলের জন্য চিঠি ফেরত আসতে পারে। 

তাই প্রাপকের সঠিক ঠিকানা সংগ্রহ করে তা সঠিকভাবে লিখতে হবে। প্রাপকের ঠিকানা লিখার একটি নমুনা নিচে দেওয়া হলো।

প্রাপক,

  • নামঃ                        যার নামে বা যে প্রতিষ্ঠানের জন্য চিঠি লেখা হচ্ছে তার নাম
  • অভিভাবকের নামঃ  প্রাপক ব্যক্তি হলে তার অভিভাবকের নাম
  • গ্রামঃ                       ব্যক্তি বা প্রাপক প্রতিষ্ঠান যে এলাকায় আছে সেই গ্রাম/ মহল্লার নাম
  • ডাকঘরঃ                  ডাকঘরের নাম
  • উপজেলাঃ               উপজেলার নাম
  • জেলাঃ                     জেলার নাম
  • মোবাইল নম্বরঃ        ব্যক্তির মোবাইল নম্বর

এছাড়াও চিঠির খামে ঠিকানা লেখার সময় অন্যান্য দিক খেয়াল করতে হয়। খামে সঠিকভাবে ডাকটিকিট লাগাতে হয়। কত দামের ডাকটিকিট খামে ব্যবহার করবেন তা নির্ভর করে আপনি চিঠি কতদূর ও কিভাবে পাঠাবেন তার উপর। 

আপনি যদি কোনো চাকরির আবেদনের জন্য চিঠি লিখেন তবে অবশ্যই আপনাকে খামের উপর মাঝখানে বরাবর নিজ জেলার নাম ও আপনি যে পদের জন্য আবেদন করছেন সেই পদের নাম উল্লেখ করতে হবে।  আরও দেখুনঃ পড়াশোনা করার স্মার্ট কৌশল | পড়াশোনা করার ৮ টি সঠিক নিয়ম | টপার রা কিভাবে পড়াশোনা করে

আশাকরি চিঠির খামে ঠিকানা লেখার নিয়ম আপনারা বুঝতে পেরেছেন। যদিও আমরা চিঠি তেমন লিখিনা, তবুও বিভিন্ন কাজে চিঠি লেখার প্রয়োজন হতেই পারে। তাই চিঠির খামে কিভাবে ঠিকানা লিখতে হয় তার সঠিক নিয়ম জেনে রাখা সকলের একান্ত কর্তব্য। 

আমরা মনে করি এই আর্টিকেল চিঠির খামে সঠিকভাবে ঠিকানা লিখতে আপনাদের কিছুটা হলেও সাহায্য করবে। আমাদের আর্টিকেল ভালো লাগলে অথবা কিভাবে আরও ভালো করা যায় সেই সম্পর্কে কোনো মতামত থাকলে তা অবশ্যই আমাদের কমেন্ট বক্সে লিখে জানাবেন। সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে শেষ আজকের মত শেষ করছি। আল্লাহ হাফেজ।

Google News