বর্তমান যুগ হচ্ছে ইন্টারনেটের যুগ। তাই আমরা প্রায় সকল চাকরির আবেদন অন লাইনে করে থাকি। তবে সরকারি কিছু চাকরির আবেদন এখনও পোস্ট অফিসের মাধ্যমে করতে হয় অর্থাৎ চিঠির মাধ্যমে করতে হয়। নির্ধারিত পদের জন্য আবেদন পত্র লিখে তার সাথে প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র ও ফেরত খাম সম্বলিত চিঠি পাঠাতে হয় নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান বরাবর। আরও দেখুনঃ জুনিয়র ফিল্ড অফিসার এর কাজ কি
আমরা অনেকেই চিঠির খামে ঠিকানা লেখার নিয়ম সম্পর্কে অবগত আছি। কিন্তু চাকরির আবেদন করার সময় যে খামের ভিতর একটা ফেরত খাম দিতে হয় তা অনেকেই জানিনা। আবার জানলেও ফেরত খামে কিভাবে ঠিকানা লিখতে হয় তা জানিনা।
একটি চাকরির আবেদন করতে অনেক সময় ব্যয় হয় ও খরচ করতে হয়। আবেদন পত্র লেখার পাশাপাশি শিক্ষাগত যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতার কাগজ পত্র, ব্যাংক ড্রাফট অথবা চালান পত্রের কপি ও ডাক টিকিট সম্বলিত ফেরত খাম সুন্দরভাবে সাজিয়ে নিয়োগ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান বরাবর পাঠাতে হয়।
কিন্তু শুধুমাত্র ফেরত খাম না দেওয়ার জন্য অথবা সঠিকভাবে ফেরত খাম না লেখার কারণে পরীক্ষার প্রবেশ পত্র অনেকেই পায় না। ফলে তার সকল কষ্ট ও অর্থ ব্যয় বৃথা যায়। তাই চাকরির আবেদন করার সময় যাতে আপনাদের কোনো প্রকার সমস্যায় পড়তে না হয় তার জন্য আমরা আজ আলোচনা করব ফেরত খামের গুরুত্ব ও ফেরত খাম লেখার বিভিন্ন নিয়ম নিয়ে। আরও দেখুনঃ আহবায়ক কমিটির কাজ কি | আহ্বায়ক কমিটি কি | আহ্বায়ক কমিটির পদ সমূহ কী কী | আহ্বায়ক কমিটি করার নিয়ম
ফেরত খামের গুরুত্ব
একটি সরকারি চাকরির আবেদনে ফেরত খামের গুরুত্ব অনেক। কারণ একটি সঠিক ফেরত খামের উপর অনেকটা নির্ভর করে আপনি চাকরির পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন কি না। আপনি যদি ফেরত খাম না দেন তাহলে আপনাকে প্রবেশপত্র পাঠাবেনা কর্তৃপক্ষ। আবার যদি সঠিকভাবে ফেরত খাম না লিখেন তা হলেও আপনাকে প্রবেশপত্র দিবেনা।
একজন অনেক স্বপ্ন নিয়ে অনেক টাকা খরচ করে চাকরির আবেদন করে থাকে। কিন্তু সামান্য ভুলের কারণে তার পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা হয় না। অনেকে তাড়াহুড়া করে চিঠি পোস্ট করতে গিয়ে ফেরত খাম দিতে ভুলে যায়। ফলে সে পরীক্ষা দিতে অকৃতকার্য হয়ে পড়ে।
যারা চাকরির আবেদন করবেন তাদের অনেক সতর্কতার সাথে ফেরত খাম চিঠির সাথে পোস্ট করতে হবে। তাই বলা যায় ফেরত খাম সঠিকভাবে লেখা ও ডাক টিকিট লাগানোর গুরুত্ব অপিরিসীম। আরও দেখুনঃ সমিতির নিয়ম কানুন | সমিতির নিয়মাবলী
ফেরত খাম লেখার নিয়ম
ফেরত খাম লেখার সময় অনেক কিছু খেয়াল রাখতে হয়। ফেরত খামে কিভাবে ঠিকানা লিখতে হয়, কিভাবে ডাক টিকিট লাগাতে হবে, খামের সাইজ কেমন হবে ইত্যাদি বিষয় খুব গুরুত্ব সহকারে লক্ষ্য রাখতে হয়। একটি ফেরত খাম লেখার সময় যে সব নিয়ম অনুসরণ করতে হয় তা নিচে বর্ণনা করা হলো।
- প্রেরকের ঠিকানা
- প্রাপকের ঠিকানা
- ডাক টিকিট
- ফেরত খামের আকার
- নিজ জেলা ও পদের নাম উল্লেখ করা
- ফেরত খাম মূল খামের ভিতর না বাহিরে থাকবে
- ফেরত খামের মুখ খোলা না বন্ধ থাকবে।
প্রেরকের ঠিকানা
ফেরত খামে প্রেরকের ঠিকানা লিখতে হয় না। অর্থাৎ প্রেরকের ঠিকানা লিখার জায়গা খালি রাখতে হবে। যে প্রতিষ্ঠান আপনাকে পরীক্ষায় অংশগ্রহনের জন্য প্রবেশ পত্র পাঠাবে তারাই তাদের ঠিকানা ও সাক্ষর সিল প্রেরকের ঠিকানার স্থানে লিখে দিবে। তাই প্রেরকের ঠিকানা লেখা থেকে বিরত থাকতে হবে। আরও দেখুনঃ দেউলিয়া ব্যাংক তালিকা ২০২৩
প্রাপকের ঠিকানা
ফেরত খামের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো প্রাপকের ঠিকানা। অনেকেই প্রাপকের ঠিকানা লিখতে ভুল করে থাকে। অনেকে না বুঝে প্রাপকের স্থানে সে যে প্রতিষ্ঠানের জন্য আবেদন লিখছে সেই প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা লিখে রাখে। ফলে তার আবেদন বাতিল হয়ে যায়।
প্রাপকের ঠিকানা অবশ্যই আপনার নিজের ঠিকানা হতে হবে। যে ঠিকানায় আপনাকে প্রবেশপত্র দিলে সহজে পাবেন সেই ঠিকানায় দেওয়াই উত্তম। স্থায়ী ঠিকানা হোক অথবা অস্থায়ী যে কোনো ঠিকানায় আপনি দিতে পারবেন।
ফেরত খামের বাম পাশ খালি রেখে ডান পাশে আপনার ঠিকানা লিখে দিতে হবে। ভুল করে তা বাম পাশে লিখলে ফেরত খামটি বাতিল হয়ে যাবে। তাই সতর্কতার সাথে খামের ডান দিকে স্পষ্টভাবে আপনার নিজের ঠিকানা লিখতে হবে।
ডাক টিকিট
অনেকে ফেরত খামে ডাক টিকিট লাগাতে ভুলে যায়। যা একটি মারাত্নক ধরনের ভুল। কারণ এতে আপনার আবেদন বাতিল হতে পারে। তাই ফেরত খামের যে কোনো স্থানে অবশ্যই ডাক টিকিট লাগাতে হবে। কত টাকা মূল্যের ডাক টিকিট লাগাতে হবে তা অনেক সময় চাকরির বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা থাকে। উল্লেখ করা না থাকলে আপনি পোস্ট অফিস থেকে জেনে নিয়ে ডাক টিকিট লাগাতে পারবেন।
অনেকে শুধু মূল খামে ডাক টিকিট লাগালেই ভাবে ফেরত খামে ডাক টিকিট লাগানোর প্রয়োজন হয়না। কিন্তু যে প্রতিষ্ঠান আপনাকে চিঠি দিবে সেই প্রতিষ্ঠান আপনার লাগানো ডাক টিকিটের সাহায্যেই আপনাকে প্রবেশপত্র পাঠিয়ে দিবে। নিয়োগকারী আপনার ফেরত খামে ডাক টিকিট লাগাবে না। তাই ফেরত খামে ডাক টিকিট না থাকলে আপনাকে তারা কোনো প্রবেশপত্র দিবে না। সুতরাং ফেরত খামে ডাক টিকিট লাগানোর বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে মনে রাখতে হবে। আরও দেখুনঃ আজকের বাজার দর ২০২৩
ফেরত খামের আকার
ফেরত খামের আকার অবশ্যই মূল খামের তুলনায় ছোট হতে হবে। ফেরত খাম যদি মূল খামের সমান অথবা বড় হয় তবে তা মূল খামের ভিতরে প্রবেশ করানো যাবে না। আবার জোর করে প্রবেশ করতে গেলে মূল খাম ছিড়ে যাওয়ার সম্ভবনা থাকে। তাই ফেরত খাম যেন মূল খামের তুলনায় আকারে ছোট হয় তা লক্ষ্য রাখতে হবে।
নিজ জেলা ও পদের নাম উল্লেখ করা
খামের উপরের দিকে অবশ্যই নিজ জেলার নাম ও আপনি যে পদের জন্য আবেদন করছেন সেই পদের নাম উল্লেখ করতে হবে। আপনি মূল খামে যে জেলার নাম ও পদের নাম দিয়েছেন ফেরত খামেও একই জেলার নাম ও পদের নাম লিখতে হবে। দুই খামের মধ্যে অমিল হলে আপনার আবেদন বাতিল হয়ে যেতে পারে।
ফেরত খাম মূল খামের ভিতর নাকি বাহিরে থাকবে
ফেরত খাম অবশ্যই মূল খামের ভিতরে রাখতে হবে। কোনো ভাবেই তা আলাদা করে পোস্ট করা যাবে না। কিন্তু ফেরত খামের ভিতরে কোনো চিঠি বা আবেদন পত্র অথবা অন্য কোনো প্রকার কাগজ প্রবেশ করানো যাবে না। মূল খামের ভিতরে ফেরত খাম সহ আবেদন পত্র আলাদাভাবে রাখতে হবে। আরও দেখুনঃ পড়াশোনা করার স্মার্ট কৌশল | পড়াশোনা করার ৮ টি সঠিক নিয়ম | টপার রা কিভাবে পড়াশোনা করে
ফেরত খামের মুখ খোলা না বন্ধ থাকবে
ফেরত খামের মুখ অবশ্যই খোলা রাখতে হবে। কারণ এই খামেই আপনার প্রবেশ পত্র আসবে। তাই মূল খামের মুখ আঠা বা অন্য কিছু দিয়ে আটকানোর সময় ফেরত খামের মুখ আটকানো যাবে না।
আবেদন পত্রের সাথে ফেরত খাম পোস্ট করার সময় উপরোক্ত বিষয় গুলো খুবই গুরুত্ব সহকারে লক্ষ্য রাখতে হবে। মনে রাখতে হবে , সামান্য ভুলের জন্য আপনি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা থেকে বঞ্চিত হতে পারেন।
আশাকরি এই আর্টিকেল ফেরত খাম নিয়ে আপনাদের সকল দ্বিধা ও অজ্ঞতা দূর করতে সক্ষম হবে। আপনারা সঠিক নিয়মে ফেরত খাম লিখবেন ও চাকুরির পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবেন এটাই আমাদের একান্ত কাম্য। আরটিকেলটি পড়ার জন্য সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে আজকের মত শেষ করছি। সবাই সুস্থ্য ও নিরাপদে থাকবেন। আল্লাহ হাফেজ।