কাজুবাদাম এর মাহাত্ম্য শারীরিক উপকারিতা দিক থেকে অস্বীকার করার নয় , দিনে ৩ থেকে ৪ টি করে কাজু বাদাম খেলে , শরীরে খনিজ পদার্থ পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি পূরণ হয়। এতে ভিটামিন এর অধিক পরিমাণে কারণে ডাক্তারা একে প্রাকৃতিক ভিটামিন ট্যাবলেট বলে উল্লেখ করে থাকেন , তো চলুন কাজু বাদাম খেলে কি হয়, এবং খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
কাজু বাদামের উপকারিতা!
প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট খনিজ ও ভিটামিন রয়েছে কাজুবাদামে, টিউমার প্রতিরোধের কাজুবাদাম এর ভূমিকা অপরিসীম, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্যান্সারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সাহায্য করে, কাজু বাদামের ম্যাগনেসিয়াম ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম, এই কারণে ব্লাড প্রেসার আক্রান্ত রোগীর খাদ্য তালিকা কাজুবাদাম রাখতে পারেন।
সুস্থ হার্টের জন্য কাজুর বিকল্প ভাবার কোন কারণ নেই , এই খাবারে এক ধরনের মনোআনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি এসিড থাকে, এই এসিড নিয়ন্ত্রণে কপারের উপস্থিতি রয়েছে, কোপা চুলের গোড়া কে শক্ত করার পাশাপাশি চুলের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে, কোপা সরিলে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ইন্জিআম এর পরিমাণ বৃদ্ধি করে, চুলের রং কে আরো গাঢ় করে এবং স্থায়ীত্ব প্রদান করে।
কাজু বাদাম ভাইরাস প্রতিরোধে খুবই গুরুত্বপূর্ণ তাই যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, তারা খাদ্যভ্যাসে বাদামকে যুক্ত করতে পারেন। এ ছাড়াও স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে কাজুবাদাম এর ভূমিকা অনস্বীকার্য , কাজুবাদামের ম্যাগনেসিয়াম মস্তিষ্কের টিস্যু এর শক্তি বাড়িয়ে তুলতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। কাজু বাদাম কে আমরা ব্রেনের পাওয়ার বুস্টার ও বলে থাকি।
তো এবার জানুন খালি পেটে কাজু বাদাম খাওয়ার উপকারিতা!
শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়ক কাজুবাদামের শক্তির মূল উপাদান কার্বোহাইড রয়েছে ,আমাদের শরীরে এটি কে ভেঙে গ্লুকোজে রূপান্তর করে। গ্লুকোজ আমাদের দেহের কোষ এবং অঙ্গ গুলির জন্য শক্তির প্রধান উৎস। খালি পেটে কাজু বাদাম খেলে আমাদের পরিপাকতন্ত্র দ্রুত গ্লুকোজকে কাজ করতে বাধ্য করে।
কষ্টোকাঠিনো দূর করে: সকালে খালি পেটে কাজু বাদাম খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি পাওয়া যায়, কাজু বাদামে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে, যা হজমে সহায়তা করার সাথে সাথে কষ্টোকাঠিনোও সাহায্য করে।।
হাড়ের গঠন মজবুত করে: ক্যালসিয়াম ম্যাগনেশিয়াম পটাশিয়াম রয়েছে , যা বিকাশ ও বল বৃদ্ধিতে বিশেষ ভূমিকা রাখে।
ওজন কমাতে সাহায্য করে: বর্তমান সময়ে স্থূলতা একটি বিশাল সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে ,আমাদের প্রতিদিনের খাদ্য অভ্যাস ও অনিয়ম আমাদের ওজন বৃদ্ধিতে কাজ করছে। একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে ফাইবারসমৃদ্ধ কাজুবাদাম ওজন নিয়ন্ত্রণে বিশেষ ভূমিকা পালন করতে পারে। এছাড়া কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণের প্রভাব দেখা যায় , যাডষ ওজন নিয়ন্ত্রণ কে প্রভাবিত করে। একসাথে কাজু তে স্তলতা বিরোধী বৈশিষ্ট্য রয়েছে, ফলে এটি স্তলতের ঝুঁকি হ্রাস করে।
এবার জানুন কাজু বাদাম খাওয়ার নিয়ম!
বর্তমান আমারা কেক, চকলেট ,আচার ইত্যাদিতে স্বাদ বৃদ্ধি করার জন্য কাজুবাদাম ব্যবহার করে থাকি, তবে কাজু বাদাম খাওয়ার ক্ষেত্রে বয়সে শারীরিক অবস্থা ভেদে কিছু নিয়ম মেনে চললে এর পুষ্টিগুণ পুরোপুরি পাওয়া যেতে পারে। তো ২ বছরের কম ছোট বাচ্চাদের জন্য কাজু বাদাম খাওয়ার ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়। এটি তাদের গলায় আটকে যেতে পারে, তাদেরকে অন্য খাবারের সাথে কাজুবাদাম মিশিয়ে খাওয়ানো যেতে পারে।
প্রতিদিন একবার, বা সপ্তাহে ৩ বার এবং একসাথে ১০ থেকে ১৫ টি বাদাম খেতে পারেন , এছাড়া দুই বছরের চেয়ে বড় বাচ্চাদের জন্য ১৫-২০ টি বাদাম খেতে পারে , প্রতিবার যদি তারা ৩০ টি বাদাম বা ৫০ গ্রাম বাদাম খায়, তাহলে তাদের প্রতি সপ্তাহে সর্বোচ্চ তিনবার খেতে দেওয়া উচিত। এবং গর্ভবতী মহিলাদের জন্য প্রতিদিন ১০ গ্রাম থেকে ৫০ গ্রাম কাজু বাদাম খাওয়া ভালো। যা ৩৫-৬৫টি বাদামের সমতুল্য।
যদি বেশি খাওয়া হয়ে যায়, তাহলে আবার সপ্তাহে মাত্র দুই থেকে তিনবার করে খাওয়া উচিত , এক্ষেত্রে আপনি আপনার ডাক্তারের পরামর্শ অনুসারে বাদাম খাওয়ার নিয়ম তৈরি করে নিতে পারেন। তাছাড়া ও ডায়াবেটিস রোগী অন্যান্য বয়স্কদের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র ৫০ গ্রাম বা ৩০ টি কাজু বাদাম খাওয়া উচিত, যা তাদের জন্য যথেষ্ট একজন প্রাপ্তবয়স্ক প্রতিবারে ৩০ থেকে ৩৫ টি বাদাম খেতে পারেন এবং প্রতিবারই ৫০ গ্রাম থেকে ৭০ প্রেম করে খেতে পারেন।
আর সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ হলো কাজু বাদাম ভিজিয়ে খাবেন কেন? জানুন:)
যেমন সাইটেক ইয়াসিট দূর করে , কাজু বাদাম এর বাইরের আবরণের সাইট্রিক এসিড বিদ্যমান থাকে, এই এসিড মানুষের ক্ষতি করে। বেশি মাত্রায় এসিড দিয়ে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা সৃষ্টি করে, এটি মিনারালের শোষণে সমস্যা করে, খাওয়ার আগে বাদাম ভিজিয়ে রাখলে সাইট্রিক অ্যাসিড নিষ্কৃয় হয়।
ইরিটেবল বাওয়েল সিস্টেম কমায়: কাজুবাদামে থাকা বাউল সিস্টেম গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা তৈরি করে, একই সাথে ইরিটেবল বাওয়েল সিস্টেম তৈরি করে, বাদাম খাওয়ার আগে ভিজিয়ে খেলে ইঞ্জাইম দূর হয়। যারা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় ভুগছেন তাদের বাদাম ভিজিয়ে খাওয়াই উত্তম।
ট্যানেন দূর হয়: বাদামে থাকা ট্যানেন হজমের সমস্যা তৈরি করে ,ভিজিয়ে রাখলে ট্যানেন দূর হয় সুতরাং বাদাম খাওয়ার পূর্বে ভিজিয়ে রাখাই ভালো।
ক্লোন এর কার্যক্রম ভালো হয়: বাদাম খাওয়ার পূর্বে ভিজিয়ে রাখলে ক্লোন থেকে বিষাক্ত পদার্থ দূর করে ,এটি পুষ্টি শোষণের জন্য ভালো।
মিনারেল এর শোষণ ব্যাহত করে: সাইট্রিক এসিড মিনারেলের শোষণ কে ব্যাহত করে, এটি শরীরে মিনারেলের ঘাটতি তৈরি করতে পারে, তাই বাদাম ভিজিয়ে খান। আগেই বলেছি এতে বাদামের ক্ষতিকর এসিড দূর হয়
কিভাবে কাজুবাদাম ভেজাবেন?
প্রথমে একটি পাত্রে পানি নিয়ে বাদাম ভেজান, ভেজানোর সময় অবশ্যই ফুটন্ত বিশুদ্ধ জল ব্যবহার করবেন। এর মধ্যে ২ চামচ লবণ দিয়ে ঢেকে দিন। ৬ ঘন্টা এভাবে ভিজিয়ে রাখুন! তারপর পানি ফেলে দিয়ে কাজু বাদাম খেতে পারেন।
কাজুবাদামের অপকারিতা!
১) কাজুবাদাম একটি ফাইবার জাতীয় খাবার তাই এটি সমস্যা দেখা দিতে পারে।
২) আমরা মাছ মাংস ডালের সাথে প্রোটিন গ্রহণ করে থাকি , তাই বেশি প্রোটিন সমৃদ্ধ কাজুবাদাম কিডনির জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।
৩) এছাড়া এই বাদামে রয়েছে ম্যাগনেসিয়াম, যা ওষুধের কার্যক্রমে বাধা প্রদান করে , আবার অনেকের বাদামে এলার্জি থাকে অতএব কাজু বাদাম খাওয়া আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ভীষণ উপকারী, তবে সকলের উচিত পরিমাণমতো কাজুবাদাম গ্রহণ করা।
আরো দেখুন: