গর্ভাবস্থায়: গর্ভবতী মা ও শিশুর জন্য বাদাম খুব উপকারী খাদ্য , গবেষণায় দেখা গেছে মা ও গর্ভের শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে বাদাম কার্যকরী। তবে গর্ভবতী মায়েরা বুঝেন না কোন বাদাম তার স্বাস্থ্যের জন্য বেশি উপকারী! কতটুকু পরিমাণে খাওয়া উচিত আর কিভাবে খেলে হিতে বিপরীত হতে পারে। অর্থাৎ বিপদ হতে পারে, আজকে জানাবো সবকিছু সম্পর্কে।
১) গর্ভধারণের পর গ্যাস্ট্রিকের সমস্যার কারণে অনেক নারীরাই গরুর দুধ খেতে পারেন না , ফলে শরীরের পুষ্টির ঘাটতি দেখা দেয়। গরুর দুধের বিকল্প হিসেবে খেতে হবে আলমন্ড বাদাম। অর্থাৎ কাঠ বাদাম। দৈনিক একটু কাঠবাদাম খেলে সেটি আপনার গরুর দুধের চাহিদা অনেক অংশেই পূরণ করে ফেলবে। যাদের এলার্জি বা অন্য কোন সমস্যা আছে তারা চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া বাদাম খাওয়া উচিত নয়।
২) মনে রাখা ভাল গর্ভবতী মা ও শিশু সুরক্ষায় সবার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ কে গুরুত্ব দিতে হবে, বাদামে উচ্চমাত্রার প্রোটিন আছে তাই এটি শিশুর মাংসপেশি গঠনে সহায়তা করে থাকে। এবং শিশুর ওজন বাড়াতে সাহায্য করে।
৩) কাঠবাদাম খেলে ত্বক ও চুলের উন্নতি ঘটে, যেহেতু বাদামে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন E থাকে ভিটামিন ই ত্বক ও চুলের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী।
৪) গর্ভবতী মা নিয়মিত বাদাম খেলে শিশুর ত্বক ও চুল ভালো হয়: শিশুর হাড় ও দাঁত গঠনে কাঠবাদাম অনেক উপকারী।
৫) গর্ভের শিশু স্বাস্থ্যের জন্য খুবই প্রয়োজনীয় উপাদান ক্যালসিয়াম এর মাধ্যমে শিশুর হাড় ও দাঁত মজবুত হয়। ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেন্টারি নেওয়ার পাশাপাশি দৈনিক কাঠবাদাম খাওয়ার অভ্যাস করুন।
৬) কাঠবাদাম স্নায়ু ত্রন্তে কাজ করে, বাদামে আছে প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম, যা কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের কাজ সচল রাখতে সাহায্য করে। এছাড়া শিশুর ওজন বাড়াতে ও ম্যাগনেসিয়াম খুব দরকারি।
৭) কাঠবাদাম শিশুর মস্তিষ্ক গঠনেও কাজ করে: বাদামে থাকা ভিটামিন বি নাইন ও ফলের শিশুর মস্তিষ্ক গঠনে সাহায্য করে, এছাড়াও নানা জটিলতা প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে এই পুষ্টিকর উপাদান গুলো। ফলে গর্ভের শিশুর বিকাশে কোন প্রকার বাধাপ্রাপ্ত হয় না।
৮) কাঠ বাদামে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট: কাঠবাদামের দুধ একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার , যা দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। বাদামে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিড, যা গর্ভবতী মায়ের হৃদপিণ্ড ভালো রাখে।
৯) কাঠবাদাম ভিটামিন ও মিনারেলেস এ ভরপুর, এতে আছে ক্যালসিয়াম ভিটামিন এ ,ভিটামিন বি টুয়েলভ, এবং ভিটামিন বডি ,গর্ভধারণের পর যারা মাছ-মাংস খেতে পারেন না, তাদের শারীরিক পুষ্টির চাহিদা পূরণ করার জন্য কাঠবাদাম বেশ কার্যকর।
১০) গর্ভবতীদের হাড়ের সুরক্ষায় বাড়তি পুষ্টি দরকার, তা বাদাম থেকে পাওয়া সম্ভব। বাদামে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম যা শিশুর বিকাশ ,হাড় গঠন, ও মায়ের শরীরে ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণ করে।
১১) রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ ও করে কাঠবাদাম: অনেক নারী গর্ভধারণের পর উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায় ভুগে থাকেন, কারো ক্ষেত্রে সমস্যা মারাত্মক হয়ে দাঁড়ায় , যা প্রিএকলামশিয়া মত রোগের কারণ হয়। এই রোগ মা ও শিশুর জন্য খুবই বিপদজনক, বাদামে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম থাকে যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। ফলে গর্ভবতী মায়ের ডায়াবেটিস থাকলে ডাক্তারের পরামর্শে বাদাম খেতে পারেন। গবেষণায় দেখা গেছে বাদামে অল্পমাত্রায় যে চিনি থাকে , তা ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষতি করে না। তুবু গর্ভবতীদের ডায়াবেটিস থাকলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শেই বাদাম খাবেন।
১২) গর্ভবতী মায়েরা বাদাম খেলে ত্বকের সুরক্ষা দেয়: গর্ভধারণের পর অনেক নারীর মুখে ব্রণ ত্বকের স্বাভাবিক রং পরিবর্তন লক্ষ করা যায়, এধরনের সমস্যায় ভোগে থাকলে কাঠ বাদাম খেতে পারেন ,ত্বকের সমস্যায় কাঠবাদাম খুব উপকারী; ত্বকের স্বাভাবিক সৌন্দর্য ধরে রাখতে সাহায্য করে। বাদাম দুধ ত্বক এ লাগালে ত্বক মসৃণ হয়।
১৩) গর্ভধারণের সময় পেটের ফাটা দাগ হওয়া টা খুব স্বাভাবিক এ সময় বাদামের তেল লাগাতে পারলে স্ট্রেচ মার্ক অথবা ফাটা দাগ কমে যায়।
এবারের জেনে নিই গর্ভাবস্থায় একজন নারী কতগুলো কাঠ বাদাম খেতে পারবেন!
গর্ভাবস্থায় একজন নারী তার শারীরিক চাহিদা পূরণ করার জন্য দৈনিক ২০ থেকে ২৫ টি কাঠ বাদাম খেতে পারবেন।
কাঠবাদাম খাওয়ার দুটি নিয়ম সম্পর্কে আমি আপনাদেরকে জানাবো:
তবে তার আগে জানাবো কাঠবাদাম খাওয়ার সঠিক নিয়ম সম্পর্কে।
কাঠ বাদাম খাওয়ার সময় শুধুমাত্র বাদামের সাদা অংশটি খেতে হবে, এর ওপরে যে লাল আবরণটা আছে সেটি কোন অবস্থাই খাওয়া যাবেনা। তাই আপনি ভিজিয়ে রেখে কাঠ বাদাম খান, অথবা কাঠবাদামের দুধ তৈরি করে খান, সব অবস্থাতেই আপনাকে প্রথমে বাদামের উপরে লাল আবরণটা তুলতে হবে।
কাঠ বাদাম খাওয়ার একটি পদ্ধতি হচ্ছে: ২০ থেকে ২৫ টি কাঠবাদাম আগের দিন রাতে পানিতে ভিজিয়ে রাখুন, ভেজানোর পূর্বে কাঠ বাদামগুলো খুব ভালোভাবে ধুয়ে নেবেন। সারারাত পানিতে ভেজার পর এর উপরের যে পাতলা আবরণ টি আছে সেটি নরম হয়ে যাবে। সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে এর পাতলা আবরণ কে ফেলে দিয়ে কাঠ বাদাম চিবিয়ে খেতে পারেন।
তৈরি করতে পারেন কাঠবাদামের দুধ: ঝামেলা ছাড়াই খুব সহজে বাদাম দুধ ঘরে তৈরি করা যায়, ফ্রিজে রেখে গরুর দুধের মতোই সংরক্ষণ ও করা যায়। তবে দুই দিনের বেশি সংরক্ষণ করে কাঠবাদামে দুধ খাওয়া যাবে না, সে ক্ষেত্রে ডিপে সংরক্ষণ করতে হবে। এতে বাদাম দুধের গন্ধ ও স্বাদ অপরিবর্তিত থাকবে।
কাঠবাদাম দুধ তৈরি করতে যা লাগবে তা হচ্ছে ২০ থেকে ২৫ টি কাঠ বাদাম , পানি ও ছাকনি। সারারাত ভিজিয়ে রাখার পর সকালবেলা বাদামের পাতলা আবরণ টি তুলে ফেলুন, এবারে আপনি এই কাঠ বাদামটি ব্লেন্ডারে ভালোভাবে ব্লেন্ড করে নিন। তারপরে ছাঁকনি দিয়ে ছেঁকে নিলেই বাদামের দুধ রেডি।
যারা প্রোটিন জাতীয় খাবার খেতে পারছেন না, দুধ খেতে পারছেন না, তারা সারা সপ্তাহের জন্য বাদামের দুধ তৈরি করে এভাবেই খেতে পারেন। তবে সেক্ষেত্রে বাদামের পরিমাণটা একটু বাড়িয়ে নেবেন, কেননা আপনার শরীরের অন্য কোনো চাহিদা পূরণ হচ্ছে না দুধ ও মাছ মাংসের মাধ্যমে। তাই চেষ্টা করতে হবে কাঠবাদাম একটু বেশি পরিমাণে খেতে।
তো পাঠক-কেমন লাগলো আজকের প্রতিবেদন সেটি কমেন্ট সেকশনে জানাতে পারেন। যদি ভালো লাগে তাহলে বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করতে পারেন আজকের মত এখানেই শেষ করছি ,ধন্যবাদ।
আরো দেখুন: