মহান আল্লাহ তা’আলা পবিত্র আল কুরআনে স্বামী স্ত্রীর ভালবাসার কথা উল্লেখ করে বলেছেন যে, স্বামী স্ত্রীর পারস্পরিক ভালোবাসা ও মায়া মমতার ওপর প্রতিষ্ঠিত দাম্পত্য জীবন। মহান আল্লাহ তা’আলা আরো বলেন যে তার নির্দেশনাবলীর মধ্যে এক নিদর্শন এই যে তিনি মাটি দিয়ে তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন। তাই এখন তোমরা পৃথিবীতে বসবাস করছো। আরও দেখুনঃ রোমান্টিক এসএমএস
স্বামী স্ত্রীর ভালোবাসা
আর এক নিদর্শন এই যে তিনি তোমাদের জন্যই তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের সঙ্গিনীদের সৃষ্টি করেছেন। যাতে তোমরা তাদের কাছে শান্তিতে থাকো এবং তিনি তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক সম্প্রীতি দয়া-মায়া মমতার সৃষ্টি করেছেন। (সূরা রুম: আয়াত ২০-২১)।
একটা সংসারের সুখ শান্তি ও আয় উন্নতি নির্ভর করে সেই সংসারের স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক সুসম্পর্ক ও ভালোবাসার ওপর। আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমার কাছে তোমাদের পার্থিব সামগ্রীর মধ্যে থেকে প্রিয় করে দেওয়া হয়েছে স্ত্রী ও সুগন্ধিকে। আর নামাজকে আমার জন্য বানানো হয়েছে চক্ষু শীতলকারী। আরও দেখুনঃ বাংলা শর্ট ক্যাপশন | ফেসবুক ক্যাপশন
হাদিসে আছে যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রীগণ তাকে তাদের জীবনের চেয়ে বেশি ভালোবাসতেন। তার প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অন্যতম সুন্নত বা আদর্শ ছিলেন স্ত্রীকে ভালোবাসা।
বন্ধুরা আমাদের আজকের আর্টিকেলে আমরা জানতে চলেছি স্বামী স্ত্রীর আদর ভালবাসা, স্বামী স্ত্রীর ভালোবাসা বৃদ্ধির আমল, স্বামী স্ত্রীর ভালোবাসা উক্তি, স্বামী স্ত্রীর ভালোবাসা গল্প, স্বামী-স্ত্রীর ভালোবাসা sms, স্বামী স্ত্রীর ভালোবাসা পিক, স্বামী স্ত্রীর ভালবাসা কেমন হওয়া উচিত, স্বামীজীর ভালোবাসা বৃদ্ধির দোয়া, স্বামী স্ত্রীর ভালোবাসা ছবি, স্বামী স্ত্রীর ভালোবাসা স্ট্যাটাস ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত। তাহলে চলুন দেখে নেওয়া যাক। আরও দেখুনঃ ভালোবাসার ছন্দ স্ট্যাটাস | নতুন ভালোবাসার ছন্দ
স্বামী স্ত্রীর ভালোবাসা ছবি
স্বামী স্ত্রীর ভালোবাসা sms
স্বামী স্ত্রীর ভালোবাসা স্ট্যাটাস
স্বামী স্ত্রীর ভালোবাসা গল্প
>>>বিয়ে হচ্ছে এমন একটি সম্পর্ক যা স্বামী-স্ত্রী উভয়েরই পারস্পরিক অধিকারের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত হয়ে থাকে। এই অধিকারগুলো হচ্ছে শারীরিক অধিকার, সামাজিক অধিকার এবং অর্থনৈতিক অধিকার। এ কারণেই স্বামী-স্ত্রী উভয়ের এটা অবশ্য কর্তব্য যে, তারা সৌহার্দ্যপূর্ণ জীবন যাপন করবে এবং কোনো প্রকার মানসিক অসন্তুষ্টি ও দ্বিধা ব্যাতিরেকেই তাদের যা কিছু আছে একে অন্যের জন্য অকাতরে ব্যয় করবে! আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেন, وَعَاشِرُوهُنَّ بِالْمَعْرُوفِ ۚ“আর তোমরা তাদের (স্ত্রীদের) সাথে উত্তম ব্যবহার কর।” [সূরা আন-নিসা: ১৯]
>>>বিবাহ স্বামী-স্ত্রীর মাঝে একটি সুদৃঢ় বন্ধন। আল্লাহ তাআলা এর চির স্থায়িত্ব পছন্দ করেন, বিচ্ছেদ অপছন্দ করেন। এরশাদ হচ্ছে: وَكَيْفَ تَأْخُذُونَهُ وَقَدْ أَفْضَىٰ بَعْضُكُمْ إِلَىٰ بَعْضٍ وَأَخَذْنَ مِنكُم مِّيثَاقًا غَلِيظًا “তোমরা কীভাবে তা (মোহরানা) ফেরত নিবে? অথচ তোমরা পরস্পর পরস্পরের অতি কাছাকাছি হয়েছ এবং তারা (নারীরা) তোমাদের নিকট সুদৃঢ় অঙ্গীকার গ্রহণ করেছে।’ [নিসা : ২১] এ সুদৃঢ় অঙ্গীকার ও চুক্তিপত্র হচ্ছে মোহরানা, আর মোহরানার কারণে ইসলাম স্বামী-স্ত্রী উভয়ের মাঝে কতেক দায়-দায়িত্ব ও অধিকার নিশ্চিত করেছে। যা বাস্তবায়নের ফলে দাম্পত্য জীবন সুখী ও স্থায়ী হবে এতে কোন সন্দেহ নেই। সে সব অধিকারের প্রায় সবগুলোই সংক্ষেপ আকারে বর্ণিত হয়েছে কোরআন ও হাদীসে। আল্লাহ তাআলা আরো এরশাদ করেন, وَلَهُنَّ مِثْلُ الَّذِي عَلَيْهِنَّ بِالْمَعْرُوفِ ، وَلِلرِّجَالِ عَلَيْهِنَّ دَرَجَةٌ ، وَاللّهُ عَزِيزٌ حَكُيمٌ “আর স্ত্রীদের যা কিছু পাওনা রয়েছে তা উত্তম আচরণের মাধ্যমে পৌঁছে দাও। আর তাদের উপর পুরুষদের একটি উঁচু মর্যাদা রয়েছে।” [সূরা আল-বাকারাহ: ২২৮]
>>>আর এভাবেই যখন স্বামী-স্ত্রী উভয়ই তাদের পারস্পরিক কর্তব্যগুলো আদায় করার জন্য প্রস্তুত হবে, তখনই তাদের উভয়ের জীবন হবে অতীব সুখময় এবং তাদের সম্পর্ক হবে চিরস্থায়ী। আর যদি এর বিপরীত হয়, তাহলে তাদের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ ও বিচ্ছেদ দেখা দেবে বৈকি। ফলে তাদের জীবন হয়ে পড়বে পুঁতিগন্ধময়। স্ত্রীলোকদের সঠিক অবস্থার প্রতি দৃষ্টি রেখে তাদের প্রতি উত্তম ব্যবহার ও উপদেশ দানের ব্যাপারে কুরআন ও হাদীসে অসংখ্য বাণী উদ্ধৃত হয়েছে। যাদের মাঝে নিবিড় বন্ধুত্ব, অঙ্গাঙ্গি সম্পর্ক, অধিক মেলামেশা, সবচেয়ে বেশি আদান-প্রদান তারাই স্বামী এবং স্ত্রী। এ সম্পর্কের চিরস্থায়ী রূপ দিতে হলে ভাল চরিত্র, পরস্পর সম্মান, নম্র-ভাব, হাসি-কৌতুক এবং অহরহ ঘটে যাওয়া ভুলচুক ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখা অবশ্যম্ভাবী এবং এমন সব কাজ, কথা ও ব্যবহার পরিত্যাগ করা, যা উভয়ের সম্পর্কে চির ধরে কিংবা মনোমালিন্যের সৃষ্টি হয়। আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন, هُنَّ لِبَاسٌ لَّكُمْ وَأَنتُمْ لِبَاسٌ لَّهُنَّ ۗ “তোমাদের স্ত্রীরা তোমাদের জন্য পোশাক স্বরূপ আর তোমরা তাদের পোশাক স্বরূপ।” (সুরা আল-বাক্বারাহঃ ১৮৭।)
স্বামী স্ত্রীর ভালোবাসা হাদিস
>>> স্বামী-স্ত্রী একজন আরেকজনের পোশাকের মতো। পোশাক যেমন আমাদের ইজ্জত-সম্মান হেফাজত করে ও আমাদের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে, ঠান্ডা ও গরম থেকে রক্ষা করে, স্বামী-স্ত্রীর ভূমিকাও তেমনি। স্বামী-স্ত্রী একজন আরেকজন সর্বশ্রেষ্ঠ বন্ধু হবে, একজন আরেকজনকে নেকীর কাজে সাহায্য করবে তাহলেই সম্ভব একটা সুখী পরিবার গড়ে তোলা। আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেন: وَلَهُنَّ مِثْلُ الَّذِي عَلَيْهِنَّ بِالْمَعْرُوفِ ، وَلِلرِّجَالِ عَلَيْهِنَّ دَرَجَةٌ ، وَاللّهُ عَزِيزٌ حَكُيمٌ“যেমন নারীদের উপর তোমাদের অধিকার রয়েছে, তেমন তোমাদের উপরও তাদের অধিকার রয়েছে ন্যায্য-যুক্তিসংগত ও নীতি অনুসারে। তবে নারীদের উপর শ্রেষ্ঠত্ব পুরুষদের। আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।” [বাকারা : ২২৮] আল্লাহ এরশাদ করেন: وَعَاشِرُوهُنَّ بِالْمَعْرُوفِ ۚ ‘তাদের সাথে তোমরা সদ্ভাবে আচরণ কর।’ [নিসা : ১৯] রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন, أَكْمَلُ الْمُؤْمِنِينَ إِيمَانًا أَحْسَنُهُمْ خُلُقًا وَخِيَارُكُمْ خِيَارُكُمْ لِنِسَائِهِمْ خُلُقًا “পূর্ণ ঈমানদার সেই ব্যক্তি যার চরিত্র সবচেয়ে সুন্দর। আর তোমাদের মধ্যে উত্তম সেই ব্যক্তি যে তার স্ত্রীর কাছে উত্তম।” (তিরমিযীঃ ১১৬২; হাদীস সহীহ, সিলসিলাহ ছহীহাহঃ ২৮৪।)
>>>রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, ما أكرَمَ النساءَ إلَّا كريمٌ ، ولَا أهانَهُنَّ إِلَّا لئيمٌ “শুধুমাত্র সম্মানিত লোকেরাই নারীদের প্রতি সম্মানজনক আচরণ করে। আর যারা অসম্মানিত, নারীদের প্রতি তাদের আচরণও হয় অসম্মানজনক।” (সুনানে আত-তিরমিযী)। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন, وعَنْ عَائِشَةَ رضي الله عنها قَالَتْ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : خَيْرُكُمْ خَيْرُكُمْ لِأَهْلِهِ وَأَنَا خَيْرُكُمْ لِأَهْلِي‘তোমাদের মাঝে যে নিজের পরিবারের কাছে ভাল, সেই সর্বোত্তম। আমি আমার পরিবারের কাছে ভাল।’ [আত-তিরমিযী -৩৮৯৫, ইবনে মাজাহ : ১৯৬৭)
স্বামী স্ত্রীর ভালোবাসা বৃদ্ধির আমল
>>>স্ত্রীর প্রতি রূঢ় আচরণ না করা। তার সহনীয় ভুলচুকে ধৈর্যধারণ করা। স্বামী হিসেবে সকলের জানা উচিত, নারীরা মর্যাদার সম্ভাব্য সবকটি আসনে অধিষ্ঠিত হলেও, পরিপূর্ণ রূপে সংশোধিত হওয়া সম্ভব নয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: وَاسْتَوْصُوا بِالنِّسَاءِ خَيْرًا، فَإِنَّهُنَّ خُلِقْنَ مِنْ ضِلَعٍ، وَإِنَّ أَعْوَجَ شَيْءٍ فِي الضِّلَعِ أَعْلَاهُ، فَإِنْ ذَهَبْتَ تُقِيمُهُ كَسَرْتَهُ، وَإِنْ تَرَكْتَهُ لَمْ يَزَلْ أَعْوَجَ، فَاسْتَوْصُوا بِالنِّسَاءِ خَيْرًا ) رواه البخاري في (كتاب النكاح) باب الوصاة بالنساء، حديث رقم (৪৭৮৭) ورواه مسلم في (كتاب الرضاع) باب الوصية بالنساء، حديث رقم (২৬৭১).( “স্ত্রীলোকদের ব্যাপারে তোমরা কল্যাণের উপদেশ গ্রহণ কর। কেননা তাদেরকে তৈরীই করা হয়েছে পাঁজরের হাড় থেকে, আর পাজরের যা সবচেয়ে বক্র তা উপরের অংশে থাকে। তুমি যদি তা সোজা করতে যাও তবে তা ভেঙ্গে যাবে। আর যদি এমনি ছেড়ে দাও তবে তা চিরদিন বক্রই থেকে যাবে। অতএব, তাদের ব্যাপারে কল্যাণের অসিয়ত গ্রহণ কর।” [বুখারি, ৩৩৩১; মুসলিম, ১৪৬৮] অন্য একটি বর্ণনায় আছে: إِنَّ الْمَرْأَةَ خُلِقَتْ مِنْ ضِلَعٍ لَنْ تَسْتَقِيمَ لَكَ عَلَى طَرِيقَةٍ ، فَإِنِ اسْتَمْتَعْتَ بِهَا اسْتَمْتَعْتَ بِهَا وَبِهَا عِوَجٌ ، وَإِنْ ذَهَبْتَ تُقِيمُهَا ، كَسَرْتَهَا وَكَسْرُهَا طَلَاقُهَا মেয়েলোককে পাঁজরের হাড় থেকে তৈরী করা হয়েছে। তুমি কোনো অবস্থায়ই সোজাপথে দৃঢ় পাবে না। তার কাছ থেকে ফায়দা গ্রহণ করতে চাইলে তা গ্রহণ কর, কিন্তু তার মধ্যে বক্রতা থাকবেই । তুমি যদি তা সোজা করতে চাও, তবে তা ভেঙ্গে যাবে, আর ভেঙ্গে যাবার শেষ পরিণতি হচ্ছে বিচ্ছেদ বা তালাক।’ [মুসলিম, ১৪৬৮] এটা যেমন সুখী পরিবার গঠনের অপরিহার্য শর্ত, আমাদের এটাও মনে রাখতে হবে, এটা একটা সৃষ্টিকর্তার আদেশ যা মানতে আমরা সকলেই বাধ্য! وَعَاشِرُوهُنَّ بِالْمَعْرُوفِ ۚ فَإِن كَرِهْتُمُوهُنَّ فَعَسَىٰ أَن تَكْرَهُوا شَيْئًا وَيَجْعَلَ اللَّهُ فِيهِ خَيْرًا كَثِيرًا “তোমরা নারীদের সাথে সদ্ভাবে জীবন-যাপন কর। অতঃপর, যদি তাদেরকে অপছন্দ কর, তবে হয়ত তোমরা এমন এক জিনিসকে অপছন্দ করছ, যাতে আল্লাহ তোমাদের জন্য অনেক কল্যাণ রেখেছেন।” (সুরা আন-নিসাঃ ১৯।)
>>>রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, عن أبي هريرة رضي الله عنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: ্রلَا يَفْرَكْ مُؤْمِنٌ مُؤْمِنَةً إِنْ كَرِهَ مِنْهَا خُلُقًا رَضِيَ مِنْهَا آخَرَগ্ধ أَوْ قَالَ: ্রغَيْرَهُগ্ধ (رواه مسلم- كتاب الرضاع- باب الوصية بالنساء- ২৬৭২( “কোন মুমিন পুরুষ যেন কোন মুমিন স্ত্রীকে তাচ্ছিল্য ও অবজ্ঞা না করে। তার আচার-আচরনের কোনো একটি অপছন্দনীয় হলেও অন্যটি সন্তোষজনক হতে পারে।” [মুসলিম, ১৪৬৯] আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এসব হাদীসে পুরুষ লোকেরা তাদের স্ত্রীদের সাথে কি ধরনের আচরন করবে সে ব্যাপারে তার উম্মাতের প্রতি দিক নির্দেশনা দিচ্ছেন। তিনি এটাই জানাচ্ছেন যে, পুরুষদের কর্তব্য হচ্ছে এই যে, সহজ উপায়ে তাদের নিকট থেকে যতটুকু সুব্যবহার পাওয়া সম্ভব, তারা যেন তাই গ্রহণ করে। কারণ, সৃষ্টিগত কারণেই তাদের প্রকৃতির মধ্যে পুরুষদের চেয়ে কিছুটা অসম্পূর্ণতা রয়েছে, পূর্ণভাবে কোনো কিছু তাদের কাছ থেকে পাওয়া যাবে না। শুধু তাই নয়, তাদের মধ্যে একটি বক্রতা রয়েছে। অতএব, যাদেরকে যে প্রকৃতির ওপর সৃষ্টি করা হয়েছে, তাকে অস্বীকার করে তাদের কাছ থেকে কোনো প্রকার কল্যাণ বা ফায়দা লাভ করা সম্ভব নয়।
>>>রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জান্নাতে প্রবেশের উপায়সমূহের মধ্যে স্ত্রীর প্রতি স্বামীর সন্তোষকে একটি অন্যতম উপায় বলে গণ্য করেছেন। عن أم سلمة رَضِيَ اللَّهُ عَنْها قالت قال رَسُول اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم: أَيُّما امرأَةٍ ماتَتْ وزوْجُهَا عَنْهَا راضٍ دخَلَتِ الجَنَّةَ )أخرجه الترمذي أبواب الرضاع عن رسول الله- صلى الله عليه وسلم-، باب ما جاء في حق الزوج على المرأة، (৩/৪৫৮)، برقم: (১১৬১)، وابن ماجه، كتاب النكاح، باب حق الزوج على المرأة (১/৫৯৫)، برقم: (১৮৫৪)، وضعفه الألباني في ضعيف الجامع الصغير وزيادته، برقم: (২২২৭) وقال في السلسلة الضعيفة: منكر، برقم: (১৪২৬).( উম্মে সালামা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, “যদি কোনো স্ত্রী এমতাবস্থায় মারা যায় যে তার স্বামী তার উপর সন্তুষ্ট, তা হলে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।” [তিরমিযি, ১১৬১] সুখকর দাম্পত্য জীবন, সুশৃঙ্খল পরিবার, পরার্থপরতায় ঋদ্ধ ও সমৃদ্ধ স্বামী-স্ত্রীর বন্ধন অটুট রাখার স্বার্থে ইসলাম জীবন সঙ্গিনী স্ত্রীর উপর কতিপয় অধিকার আরোপ করেছে। গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি এখানে প্রদত্ত হল।
>>>স্বামীর আনুগত্য করা স্ত্রীর কর্তব্য। তবে যে কোন আনুগত্যই নয়, বরং যেসব ক্ষেত্রে আনুগত্যের নিম্ন বর্ণিত তিন শর্ত বিদ্যমান থাকবে। (ক) ভাল ও সৎ কাজ এবং আল্লাহর বিধান বিরোধী নয় এমন সকল বিষয়ে স্বামীর আনুগত্য করা। সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর অবাধ্যতায় কোন সৃষ্টির আনুগত্য বৈধ নয়। (খ) স্ত্রীর সাধ্য ও সামর্থ্যর উপযোগী বিষয়ে স্বামীর আনুগত্য করা। কারণ আল্লাহ তাআলা মানুষকে তার সাধ্যের বাইরে অতিরিক্ত দায়িত্বারোপ করেন না। (গ) যে নির্দেশ কিংবা চাহিদা পূরণে কোন ধরনের ক্ষতির সম্ভাবনা নেই, সে ব্যাপারে স্বামীর আনুগত্য করা। আনুগত্য আবশ্যক করে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেনঃ وَلِلرِّجَالِ عَلَيْهِنَّ دَرَجَةٌ “নারীদের উপর পুরুষগণ শ্রেষ্ঠত্ব ও কর্তৃত্বের অধিকারী।” [বাকারা : ২২৮] আল্লাহ তাআলা আরো এরশাদ করেন, الرِّجَالُ قَوَّامُونَ عَلَى النِّسَاءِ بِمَا فَضَّلَ اللَّهُ بَعْضَهُمْ عَلَىٰ بَعْضٍ وَبِمَا أَنفَقُوا مِنْ أَمْوَالِهِمْ ۚ ‘পুরুষগণ নারীদের উপর কর্তৃত্বকারী। কারণ আল্লাহ তাআলা-ই তাদের মাঝে তারতম্য ও শ্রেষ্ঠত্বের বিধান রেখেছেন। দ্বিতীয়ত পুরুষরাই ব্যয়-ভার গ্রহণ করে।” [নিসা : ৩৪] উপরন্তু এ আনুগত্যের দ্বারা বৈবাহিক জীবন স্থায়িত্ব পায়, পরিবার চলে সঠিক পথে। স্বামীর কর্তব্য, এ সকল অধিকার প্রয়োগের ব্যাপারে আল্লাহর বিধানের অনুসরণ করা। স্ত্রীর মননশীলতা ও পছন্দ-অপছন্দের ভিত্তিতে সত্য-কল্যাণ ও উত্তম চরিত্রের উপদেশ প্রদান করা কিংবা হিতাহিত বিবেচনায় বারণ করা। উপদেশ প্রদান ও বারণ করার ক্ষেত্রে উত্তম আদর্শ ও উন্নত মননশীলতার পরিচয় দেয়া । এতে আনন্দ চিত্তে ও স্বাগ্রহে স্ত্রীর আনুগত্য পেয়ে যাবে।
– স্বামী-স্ত্রী পরস্পরের ভালোবাসা যদি আল্লাহর জন্য হয় আবার ঘৃণা করাও যদি তার জন্য হয় তবে তারা আরশের ছায়ায় স্থান পাওয়া ৭ শ্রেণির অন্তর্ভূক্ত হবে। সুতরাং দাম্পত্য জীবনে দ্বীনদারী, ইবাদত-বন্দেগি, সততা, নৈতিকতা, সচ্চরিত্র, সদাচার ইত্যাদি ক্ষেত্রে ভালোবাসা এবং ঘৃণা হবে আল্লাহর জন্য।
– যে শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই তাঁর বান্দাকে ভালোবাসে। আর
– যাকে আল্লাহ কুফর থেকে মুক্তি দিয়েছেন, তারপর সে কুফরের দিকে ফিরে যাওয়াকে এমন অপছন্দ করে যেমন আগুনে নিক্ষিপ্ত হওয়াকে অপছন্দ করে।’ (মুসলিম)
স্বামী স্ত্রীর ভালোবাসা কেমন হওয়া উচিত
>>> পারস্পরিক কথাবার্তা
দাম্পত্য জীবনে স্বামী-স্ত্রী যদি একে অপরের সঙ্গে সুন্দর ভাষায় কথা বলে তবে হাদিসের পরিভাষায় তাদের জন্য রয়েছে সাদকা করার সাওয়াব। হাদিসে এসেছে-
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘একটি ভালো কথা হল সাদকা।’ (বুখারি)
>>> হাসি মুখে কথা বলা
দাম্পত্য জীবনে স্বামী-স্ত্রী যদি একে অপরের সঙ্গে মুচকি হেসে কথা বলে তবে হাদিসের পরিভাষায় তাদের জন্য তাতেও রয়েছে সাদকা করার সাওয়াব। হাদিসে এসেছে-
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তোমার ভাইয়ের (সাক্ষাতে) মুচকি হাসাও একটি সাদকা।’ (তিরমিজি)
> >>পরস্পরের উপকার
দাম্পত্য জীবনে স্বামী-স্ত্রী যদি একে অপরের কোনো উপকার করে বা ভালো কাজ করে তবে এর বিনিময়ে সাদকার সাওয়াব লাভ করবে। আর একজন অপর জনের উপকার করায় আল্লাহর কাছে শ্রেষ্ঠ ও প্রিয় মানুষ হওয়ার মর্যাদা লাভ করবে তারা। একাধিক হাদিসে এসেছে-
– রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘প্রতিটি ভালো কাজ সাদকা। আর তোমার তোমাদের ভাইয়ের সঙ্গে হাসিমুখে সাক্ষাৎ করাটাও একটি ভালো কাজ।’ (তিরমিজি)
– ‘যে ব্যক্তি মানুষের বেশি উপকার করে সেই শ্রেষ্ঠ মানুষ।’ (ইবনে হিব্বান)
– ‘আল্লাহর কাছে সেই ব্যক্তি সর্বাধিক প্রিয় যে সর্বাধিক মানুষের উপকার করে।’> >>পারিবারিক খরচ
দাম্পত্য জীবনে স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক খরচ বহন ও একে অপরের মুখে খাবার তুলে দেয়ায় রয়েছে শ্রেষ্ঠ সাদকার সাওয়াব পাওয়ার ঘোষণা। হাদিসে এসেছে-
প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘শ্রেষ্ঠ সাদকা হল, একজন মানুষ তার স্ত্রীর মুখে এক লোকমা খাবার তুলে দেবে।’ (বুখারি ও মুসলিম)
> >>বিধিনিষেধ মেনে চলা
দাম্পত্য জীবনে আল্লাহর বিধিনিষেধ মেনে চলায় রয়েছে বিশেষ সাওয়াব ও উপকারিতা। স্বামী স্ত্রী যদি একে অপরকে সৎকাজের আদেশ ও অসৎ কাজে নিষেধ করে, তাতেই তারা সদকার সাওয়াব পাবে। হাদিসে এসেছে-
‘সৎকাজের আদেশ দেয়া, অসৎ কাজ হতে বিরত রাখা সাদকা।’ (মুসলিম)
স্বামী স্ত্রীর ভালোবাসা বৃদ্ধির দোয়া
স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে যদি মিল মহব্বত কমে যায় বা উভয়ের মাঝে বনিবনা না হয় বা তাদের একজন অপর জনের ওপর অসন্তুষ্ট হয় তাহলে , পবিত্র কুরানের এই আয়াত, وَأَلْقَيْتُ عَلَيْكَ مَحَبَّةً مني وَلِتُصْنَعَ عَلَىٰ عَيْنِي (ও আলকাইতু আলাইকা মুহাব্বাতাম মিন্নি ও লি তুসনিয়া আলা আইনী ) (সুরা তহা-৩৯) স্বামী রাগ করলে স্ত্রী স্বামীর মুখের দিকে তাকিয়ে পড়তে থাকবে । (যখন যখন স্বামী স্বামী সামনে আসবে তখন তখন স্ত্রী এই আমল করবে ) ।আর স্ত্রী রাগ করলে স্বামী স্ত্রীর মুখের দিকে তাকিয়ে পড়তে থাকবে । (যখন যখন স্ত্রী সামনে আসবে তখন তখন স্বামী এই আমল করবে ) । আল্লাহর রহমাতে দুজনে মধ্যে ভালোবাসা সৃষ্টি হবে ।
মনে রাখতে হবে,
দাম্পত্য জীবনে স্বামী-স্ত্রীর সুসম্পর্ক ও স্বাভাবিক কথাবার্তায় শুধু সাওয়াবই নয় বরং পারিবারিকভাবে তা হতে পারে পরস্পরের দাওয়াতি কাজের অংশ। পরিবারে উভয়েই হতে পারে স্বাতন্ত্র দায়ী।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পবিত্র জীবনেও এর শুভ সূচনা হয়েছিল। তিনি সর্ব প্রথম নিজ স্ত্রী হজরত খাদিজা রাদিয়াল্লাহু আনহুর কাছেই নবুয়তের দাওয়াত দিয়েছিলেন। তার কথা ও কাজের সুন্দর প্রকাশ ও বাস্তবায়ন হয়েছিল আম্মাজান হজরত খাদিজা রাদিয়াল্লাহু আনহার মাঝে। সর্বকালে সর্বযুগে বিশ্বনবি নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পারিবারিক জীবন অনুপ্রেরণা ও কল্যাণ লাভের একমাত্র উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে দাম্পত্য জীবনে স্বামী-স্ত্রী পরস্পরে মাঝে সব স্বাভাবিক কথা ও কাজকে সাওয়াবে পরিপূর্ণ করে দিন। হাদিসের আলোকে শান্তিপূর্ণ সুখময় জীবন হিসেবে কবুল করুন। আমিন।