সমাজকর্ম আধুনিক সমাজ কল্যাণ এর একটি বিজ্ঞানসম্মত সাহায্যকারী মাধ্যম। সমাজের জটিল ও বহুমুখী সমস্যা মোকাবিলায় সমাজকর্মের গুরুত্ব অত্যধিক। বর্তমান সমাজকর্ম সারাবিশ্বে পেশা হিসেবে স্বীকৃত। এটি সমাজকল্যাণের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রত্যয় হিসেবেও বিবেচিত।সমাজকল্যাণের আধুনিক পরিশীলিত রূপ হল পেশাদার সমাজকর্ম। এটি এমন একটি সাহায্যকারী পেশা যার কতকগুলো পদ্ধতির মাধ্যমে ব্যক্তি,দলের পূর্ণবিকাশ ও উন্নতি লাভ করা সম্ভব হয়। আরও দেখুনঃ শিল্পায়ন ও শহরায়ন এর পার্থক্য | শিল্পায়ন বনাম শহরাঞ্চল
সমাজকর্মের বৈশিষ্ট্য সমূহ:
সমাজকর্মের সংজ্ঞা বিশ্লেষণ করে আধুনিক সমাজকর্মের স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য স্পষ্টভাবে ফুটে উঠে। নিম্নে সমাজকর্মের সংজ্ঞার আলোকে বৈশিষ্ট্যসমূহ বর্ণনা করা হলো:
১. বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি: আধুনিক সমাজকর্মের দৃষ্টিভঙ্গি বিজ্ঞাননির্ভর।এখানে কুসংস্কারের কোন স্থান নেই। সমাজকর্মে মানুষের সমস্যার প্রকৃত কারণ খুঁজে বের করা হয় এবং সমস্যার প্রেক্ষিতে বাস্তবসম্মত সমাধান দেওয়া হয়। যারা সমস্যা সমাধানের কাজে নিয়োজিত থাকেন তারা হলেন সমাজকর্মী। উন্নত দেশসমূহে তাদেরকে সামাজিক ডাক্তার বলা হয়।
২. সংগঠিত সাহায্য দান পদ্ধতি: সংগঠিত সাহায্য দান পদ্ধতি সমাজকর্মের অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য।এই বৈশিষ্ট্যটি সমাজের সকল মানুষের জীবনমান উন্নয়নে সহায়তা করে থাকে। কাজেই সনাতন সমাজকর্ম থেকে এই বৈশিষ্ট্যটি সম্পূর্ণভাবে আলাদা সত্ত্বা দান করেছে।
৩. সক্ষমকারী প্রক্রিয়া: সমাজের মানুষ যাতে সক্ষম হয়ে গড়ে উঠতে পারে সেজন্য সমাজকর্মের বৈশিষ্ট্য টি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সমাজকর্ম সাহায্যপ্রার্থীকে এমনভাবে সহায়তা করে যাতে ব্যক্তি তার নিজস্ব সম্পদ ও সামর্থের সদ্ব্যবহারের মাধ্যমে স্বনির্ভরতা অর্জন করতে পারে। এতে সমাজের পরমুখাপেক্ষিতা দূর হয়।
৪. সর্বজনীন কল্যাণ: সমাজে বসবাসরত সকল শ্রেণী বাদল অর্থাৎ ছোট-বড়, উঁচু-নিচু,ধনী-গরিব, সাদা-কালো প্রভৃতি সকল মানুষের কল্যাণ সাধন করা সমাজকর্ম এর অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
৫. সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি: মানুষের দৈহিক, মানসিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও নৈতিক দিক সহ জীবনের সকল দিক পরস্পর সম্পর্কযুক্ত। এগুলোর একটিকে বাদ দিয়ে অন্যটির উন্নয়ন চিন্তা করা যায় না। সমাজকর্ম মানুষের সকল দিকের উন্নয়নের সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কাজ করে থাকে।
৬. সমস্যার স্থায়ী সমাধান: সমাজকর্ম সমস্যার কারণ, প্রকৃতি ও পরিধি নির্ণয় করে যথাযথ সমাধান এর পথ নির্দেশ দিয়ে থাকে। সমাজকর্মের বিভিন্ন পদ্ধতি ও নিজস্ব সম্পদের ব্যবহার করে এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান প্রক্রিয়া বের করা হয়।
৭. ত্রিমুখী পদক্ষেপ: সমাজের সমস্যার যথাযথ সমাধান করার মাধ্যমে কাঙ্খিত সামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিতকরণে সমাজকর্মের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে ত্রিমুখী ভূমিকা পালন করা। সমাজকর্ম সমাজের সমস্যা সমাধানে প্রতিকার, প্রতিরোধ ও উন্নয়ন এ তিন ধরনের কাজে ভূমিকা পালন করে থাকে।
উপরিক্ত বৈশিষ্ট্যগুলো ছাড়াও আরো কিছু স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য রয়েছে সমাজকর্মের যে গুলি হল:
পেশাগত জ্ঞান অর্জন, গতিশীল ভূমিকা, সমস্যাগ্রস্ত তাদের অংশগ্রহণ, জাতীয় উন্নয়ন, সুপ্ত ক্ষমতার বিকাশ, সামাজিক পার্থক্য রাস হ্রাস, জনগণের চাহিদাকে অগ্রাধিকার, সম্পদের যথার্থ ব্যবহার, প্রাতিষ্ঠানিক সাহায্যদান প্রক্রিয়া, পদ্ধতি ভিত্তিক সমাধান প্রক্রিয়া, বিশেষ নীতিমালা ও মূল্যবোধ, পেশাগত সংগঠন, নির্ধারিত পারিশ্রমিক, ও উন্নত জীবন মান।
পরিশেষে বলা যায় যে, উপরিউক্ত বৈশিষ্ট্যসমূহ প্রমাণ করে যে, সমাজকর্ম একটি বিজ্ঞান ভিত্তিক পদ্ধতি হিসেবে মানুষের সমস্যার সমাধানে সক্ষম। একটি সুন্দর সমাজ বিনির্মাণে সমাজকর্মের উক্ত বৈশিষ্ট্যসমূহের উপস্থিতি অপরিহার্য।