রোজা ভাঙ্গার কারণ: রোজা হলো গুরুত্বপূর্ণ একটি ফরজ এবাদত। রোজা এমন একটি বিধান, যেটা মানবজাতিকে কয়েক গুণ বেশি সওয়াব পাওয়ার সুযোগ বৃদ্ধি করে দেয়। আমরা অনেকেই রোজা রাখার ফজিলত সম্পর্কে অবগত। আবার অনেকেই রয়েছি যারা রোজার ফজিলত এবং হাদিস সম্পর্কে অবগত নই।
তাই যে বা যারা রোজার ফজিলত সমূহ এবং রোজা ভাঙ্গার কারণ, রোজা রাখার দোয়া বা নিয়ত ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে জানতে আগ্রহী তারা আমাদের আজকের প্রবন্ধটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ুন। কেননা আমাদের আজকের আলোচনায় রোজা ভাঙার কারণ সমূহ ও এর ফজিলতের এ টু জেড আলোচনা করা হচ্ছে।
রোজা কাকে বলে?
রোজা হল ইসলাম ধর্মের পাঁচটি মূল ভিত্তির একটি। মূলত সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সকল প্রকার পানাহার, পাপাচার কামাচার এবং সেই সাথে যাবতীয় ভোগবিলাস থেকে বিরত থাকাকে রোজা বলে। প্রাপ্তবয়স্ক সকল মুসলিম নারী পুরুষের রমজান মাসের রোজা রাখা ফরজ এবাদত হিসেবে নির্ধারিত।
রোজা রাখার শর্ত কি?
রোজা রাখার সুনির্দিষ্ট তিনটি শর্ত রয়েছে। সেগুলো হলো:
✓ নিয়ত করা
✓ পানাহার থেকে বিরত থাকা এবং
✓ যৌন আচরণ থেকে বিরত থাকা
রোজা রাখার মৌলিক শর্ত কয়টি ও কি কি?
রোজা রাখার মৌলিক শর্ত রয়েছে চারটি। সেগুলো হলো –
✓ মুসলিম হওয়া
✓ সক্ষম হওয়া
✓ বালেক হওয়া এবং
✓ ঋতুস্রাব থেকে বিরত থাকা মহিলা।
রোজা কয় প্রকার ও কি কি?
রোজা পাঁচ প্রকার, যথা:
- ফরজ রোজা
- ওয়াজিব রোজা
- নফল রোজা
- সুন্নত রোজা এবং
- মুস্তাহাব রোজা
মাহে রমজানের দীর্ঘ এক মাস রোজা হচ্ছে ফরজ রোজা। এবার চলুন পরবর্তীতে জেনে নেই রোজা ভাঙ্গার কারণ এবং রোজায় বিধিনিষেধ সম্পর্কে।
রোজা ভাঙ্গার কারণ কয়টি ও কি কি?
রোজা ভাঙ্গার মূলত বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে। তবে প্রধান কারণ হিসেবে তিনটি বিষয়কে চিহ্নিত করা হয়। তাই রোজা ভাঙ্গার কারণ কি মূলত তিন ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। সেগুলো হলো:-
- খাওয়া
- পান করা এবং
- সম্পর্কে লিপ্ত
সুতরাং আপনি যদি নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বে কোন খাবার খেয়ে ফেলেন বা তৃষ্ণা মেটাতে পানি পান করে থাকেন, পাশাপাশি স্ত্রীর সাথে অথবা স্বামীর সাথে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হোন তাহলে সেগুলো রোজা ভাঙ্গার কারণ হবে।
রোজা ভাঙ্গার কারণ সমূহ
রোজা ভাঙ্গার প্রায় অনেকগুলো কারণ রয়েছে। আর তাই আপনি যদি পবিত্র মাহে রমজানে সঠিক নিয়মে রোজা রাখতে চান তাহলে অবশ্যই রোজা ভাঙ্গার সকল কারণ সমূহ সম্পর্কে অবগত হওয়া অধিক বেশি জরুরী। তাই আসুন এ পর্যায়ে পড়ে নেই— রোজা ভাঙ্গার কারণ এবং সে সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা।
✓ ধূমপান
বিড়ি সিগারেট বা হুকা সেবন করলে রোজা ভঙ্গ হয়। পাশাপাশি কোন নেশা জাতীয় পণ্য সেবনেও রোজা ভেঙে যায়। যেমন: মদ, গাজা, আফিম, পান, সুপরি ইত্যাদি খাওয়া।
✓ পানাহার
ভুলে অনিচ্ছাকৃতভাবে সামান্য পানি খেয়ে ফেলার পর যদি মনে করে এবং আবারো ইচ্ছাকৃতভাবে পানি খাওয়া হয়, তাহলেও রোজা ভেঙে যায়। মূলত অনিচ্ছাকৃতভাবে পানি খাওয়ার পরবর্তীতে ইচ্ছাকৃতভাবে পানি খাওয়াটাও রোজা ভঙ্গের কারণ।
✓ খাওয়া
পানাহার থেকে দূরে থাকাটাই হচ্ছে রোজা। আর সেটা তরল জাতীয় কোন খাবার হোক অথবা আশজাতীয়। তাই যেকোনো কিছু সামান্য পরিমাণে খেলেও রোজা ভঙ্গ হয়।
✓ হস্তমৈথুন
কিছু মানুষ রয়েছেন যারা হস্তমৈথুন এ আসক্ত। কিন্তু রোজা ভাঙ্গার কারণগুলোর মধ্যে এটিও অন্যতম হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
✓ রক্ত
দাঁত দিয়ে রক্ত বের হলে যদি সেটা থুতুর চাইতে বেশি পরিমাণ হয়ে যায় তাহলে অবশ্যই ফেলে দেওয়া জরুরী। আর থুতুর চাইতে রক্তের পরিমাণ বেশি হলে তার গিলে ফেললে রোজা ভঙ্গ হয়। তাছাড়াও ঋতুস্রাবের কারণে শরীর থেকে রক্ত নির্গত হলেও রোজা ভেঙে যায়।
✓ ওষুধ সেবন
কানে অথবা নাকের ছিদ্র দিয়ে যদি কোন তরল ঔষধ দেওয়া হয় অথবা ইনজেকশন নেওয়া হয় তাহলেও রোজা ভেঙ্গে যায়। কেননা রোজার নিয়ম গুলোর মধ্যে এটা বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে কোন বাইরের পদার্থ শরীরের ভেতরে প্রবেশ করলেই রোজা ভেঙে যাবে। তাই রোজা থাকাকালীন অবস্থায় কোনো ওষুধ সেবন করা থেকে দূরে থাকুন।
✓ বমি
ইচ্ছাকৃতভাবে বমি করাটাও রোজা ভঙ্গের কারণ হিসেবে পরিগণিত। আবার বমি করার পরবর্তীতে সেটা গিলে নেওয়াটাও রোজা ভাঙার কারণ।
✓ সহবাস
যদি কেউ রোজা থাকাকালীন অবস্থায় সঙ্গমে লিপ্ত হয় তাহলেও রোজা ভঙ্গ হয়। অনেকেই রয়েছেন যারা আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে দিনকে রাত ধারণা করে খাবার খেয়ে ফেলেন এমনকি যৌন সঙ্গমে লিপ্ত হন, যেটা রোজা ভঙ্গের কারণ হিসেবে গ্রহণযোগ্য।
তাছাড়াও বৃষ্টি বরফের টুকরা খাদ্য নালীর ভেতরে চলে গেলেও রোজা ভেঙে যায়, সূর্যাস্ত হয়ে গেছে মনে করে, ভুলের দিনে ইফতার করলেও রোজা ভেঙে যায়। শুধু তাই নয় রাত মনে করে সুবহে সাদিকের সময় সাহরি খেলেও রোজা ভাঙ্গে এবং রোজা থাকা অবস্থায় কুলি কিংবা নাকে পানি দেওয়ার সময় তা কণ্ঠনালীতে প্রবেশ করলেও রোজা ভেঙে যায়।
তাই অবশ্যই একজন রোজাদার ব্যক্তির এই বিষয়গুলো মাথায় রাখা অত্যন্ত জরুরি। আর হ্যাঁ আমাদের মাঝে কিছু মানুষ রয়েছেন যারা হুটহাট কাঠ, পাথর, কাগজ, সুতা, খড়কুটো, তুলা, কংকর ইত্যাদি খেয়ে ফেলেন। মূলত এই ধরনের কোন বস্তু খাওয়াও রোজা ভাঙার কারণ হিসেবে দায়ী। তাই রমজান মাসে সঠিক নিয়ম মেনে রোজা রাখতে অবশ্যই রোজা ভাঙ্গার এই প্রত্যেকটি কারণ মাথায় রাখুন এবং সঠিক নিয়মে রোজা রাখুন। মহান রাব্বুল আলামিন আমাদের প্রত্যেক মুসলিমের রোজা রাখার তৌফিক দান করুন এবং তা কবুল করুন আমীন।
রোজা ভাঙ্গার নিয়ত | রোজা ভাঙ্গার দোয়া
রোজা ভাঙ্গার নিয়ত কি, রোজা ভঙ্গের দোয়া এবং রোজা ভঙ্গের নিয়ম কি? অনেকেই এ সম্পর্কে জানতে খুবই আগ্রহী। কেননা রোজা মুসলিমদের জন্য অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ। রমজান মাসে রোজা রাখা ফরজ এবাদতের শামিল। যারা রোজা রাখেন তারা হলেন মহান আল্লাহ তাআলার অত্যন্ত প্রিয় বান্দা। জানে অবাক হবেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরআন ও হাদিসে এরশাদ করেছেন— যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে সওয়াবের আশায় তারাবির নামাজ পড়ে, যে ব্যাক্তি ঈমানের সঙ্গে সোয়াবের আশায় রমজানে রোজা রাখে তার অতীতের সকল গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়। সুবহানাল্লাহ।
আর তাই আপনি যদি মাহে রমজানের রোজা রাখেন তাহলে আপনিও রোজার ফজিলত গ্রহণে নির্বাচিত হবেন। কোন কারণ ব্যতীত রোজা ভেঙে ফেলা পাপের শামিল। তাই একজন মুসলিম হিসেবে অবশ্যই আপনার মাহে রমজানের রোজা রাখাটা অতীব জরুরী। তাই অবশ্যই রোজা ভাঙ্গা থেকে বিরত থাকবেন। তবে ইফতারের সময় রোজা ভাঙতে অবশ্যই যে দোয়াটি পাঠ করবেন সেটা হলো —
“আল্লাহুম্মা সুমতু লাকা ওয়া তাওয়াক্কালতু আ’লা রিযকিকা ওয়া আফতারতু বিরাহমাতিকা ইয়া আরহামার রাহিমীন।”
বাংলা অর্থ : হে আল্লাহ! আমি তোমারই সন্তুষ্টির জন্য রোজা রেখেছি এবং তোমারই দেয়া রিযিক্বের মাধ্যমে ইফতার করছি।
এবং ইফতার গ্রহণের কিছুক্ষণ পূর্বে চেষ্টা করবেন সর্বদা‘ইয়া ওয়াসিয়াল মাগফিরাতি, ইগফিরলী’ এ দোয়াটি পাঠ করবার। কেননা এর অর্থ হল এটাই হে মহান ক্ষমাদানকারী আল্লাহ, আমাকে ক্ষমা করুন। মহান আল্লাহ তা’আলা আমাদের মাহে রমজানের দীর্ঘ একমাস রোজা রাখার তৌফিক দান করুন আমীন।
আরও দেখুনঃ