শিক্ষা জীবন শেষ হলে প্রায় সবার একটি উদ্দেশ্য থাকে তা হলো চাকরি প্রাপ্তি। আর চাকরি পাওয়ার জন্য একটি ভালো আবেদন পত্র খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। আমরা অনেকেই আবেদন পত্র লিখতে অভ্যস্ত। কিন্তু যারা শিক্ষা জীবনের শেষ পর্যায়ে আছে বা সদ্য শেষ করেছেন তারা অনেকেই বুঝতে পারে না কিভাবে একটি চাকরির আবেদন পত্র লিখতে হয়।
আবার অনেকেই ভালো করে আবেদন পত্র লিখতে না পারায় কাঙ্ক্ষিত চাকরির দেখা পাচ্ছে না। কারণ একটি ভালো আবেদন পত্র চাকরি পাওয়া না পাওয়ার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই আমরা আজ এই আরটিকেলে আলোচনা করব কিভাবে আপনি একটি ভালো ও মানসম্মত আবেদন পত্র লিখতে পারবেন। আরও দেখুনঃ জুনিয়র ফিল্ড অফিসার এর কাজ কি
আবেদন পত্র কি
নির্দিষ্ট নিয়মনীতি ও কাঠামো অনুসরণ করে কোনো প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষের নিকট কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ে আবেদন জানিয়ে যে পত্র লেখা হয় তাকে আবেদন পত্র বলে। আবেদন পত্র বিভিন্ন রকম হতে পারে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য আমরা যেভাবে আবেদন পত্র লিখি চাকরির ক্ষেত্রে আবেদন পত্র ভিন্ন হয়ে থাকে। আবার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ও সংবাদ পত্রের জন্য লেখা আবেদন পত্র আলাদা হয়ে থাকে। আরও দেখুনঃ আহবায়ক কমিটির কাজ কি | আহ্বায়ক কমিটি কি | আহ্বায়ক কমিটির পদ সমূহ কী কী | আহ্বায়ক কমিটি করার নিয়ম
চাকরির আবেদন পত্র
আমরা চাকরি পাওয়ার আশায় কোনো প্রতিষ্ঠানের মানব সম্পদ বিভাগ বরাবর অথবা শীর্ষ কর্তৃপক্ষ বরাবর আমরা যে আবেদন পত্র লিখি তাকেই চাকরির আবেদন পত্র বলে। যে কোনো চাকরিতে অংশগ্রহনের জন্য আবেদন পত্র বা কভার লেটার গুরুত্ব সহকারে লিখতে হয়।
চাকরির আবেদন পত্রের গুরুত্ব
একটি চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে আবেদন পত্র খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আপনার আবেদন পত্র যদি নিয়োগ দাতাকে আকৃষ্ট করতে পারে তবে আপনার চাকরি প্রাপ্তির সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। আর যদি আবেদন পত্রটি পছন্দ না হয় বা ত্রুটিপূর্ণ হয়ে থাকে তাহলে চাকরি প্রাপ্তির সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে যায়।
একট চাকরির জন্য আবেদন পত্র লেখার পূর্বে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ভালো করে পড়তে হয়। নিয়োগ দাতা প্রতিষ্ঠান কি কি যোগ্যতা ও শর্ত বিজ্ঞপ্তিতে দিয়েছে তা ভালোভাবে লক্ষ্য করে আবেদন পত্র লিখতে হবে। আপনি সেই পদের জন্য যোগ্য কি না তা সবার আগে দেখা উচিত। আরও দেখুনঃ বিতর্ক প্রতিযোগিতার উপকারিতা
চাকরির আবেদন পত্র লেখার জন্য আপনাকে কিভাবে একটি চাকরির আবেদন পত্র লিখতে হয় ও কি কি নিয়ম অনুসরণ করতে হয় তা ভালোভাবে জেনে নিতে হবে। আবেদন পত্রের ভাষা মার্জিত হতে হবে। আপনার আবেদন পত্রের ভাষা পড়েই যেন নিয়োগ দাতা আপনার প্রতি আগহী হয়ে উঠে সেই দিক লক্ষ্য রাখতে হবে।
শুধুমাত্র আবেদন পত্র যথেষ্ট মান সম্মত না হওয়ায় হাজার হাজার চাকরি প্রত্যাশী তাদের যোগ্যতা থাকা স্বত্বেও চাকরির তীব্র প্রতিযোগিতা মূলক বাজারে টিকতে পারছেনা। ফলে দিনের পর দিন বেকারত্বের অভিশাপ বয়ে বেড়াচ্ছে। তাই কিভাবে একটি আবেদন পত্রকে মান সম্মত ও আকর্ষণীয় করা যায় সেই বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করতে হবে।
আপনাকে যে প্রতিষ্ঠান চাকরি দিবে তার নিকটে নিজেকে স্মার্ট ভাবে উপস্থাপন করার জন্য একটি মান সম্মত ও রুচিশীল আবেদন পত্র খুবই প্রয়োজন। কারণ নিয়োগ দাতা আপনার আবেদন পত্র দেখেই আপনার প্রতি একটি ধারণা মনে পোষণ করবে। আবেদন পত্র সুন্দর ও মানসম্মত হলে প্রতিষ্ঠান আপনার প্রতি আকৃষ্ট হবে ও আপনার চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা অন্যদের তুলনায় বৃদ্ধি পাবে।
তাই অন্যদের থেকে নিজেকে এগিয়ে রাখতে আমাদের সকলের উচিত চাকরির আবেদন পত্র লেখার সকল নিয়ম কানুন জেনে নেওয়া ও আবেদন পত্রের ভাষা যেন মার্জিত হয় সেই দিক লক্ষ্য রাখা। মনে রাখতে হবে, একটি মানসম্মত আবেদন পত্র আপনার চাকরি প্রাপ্তির বড় হাতিয়ার।
চাকরির আবেদন পত্র লেখার নিয়ম
আবেদন পত্রকে আনুষ্ঠানিক পত্র বলা হয়। তাই এই পত্র লেখার কিছু কাঠামোবদ্ধ ও গঠণ মূলক নিয়ম আছে। আপনাকে সেই সকল নিয়ম অনুসরণ করেই আবেদন পত্রটি লিখতে হবে। চিঠির মত করে ইচ্ছা মত মনের ভাব প্রকাশ করা যাবে না। আবার আবেদন পত্র দীর্ঘ করা যাবে না, অল্প লেখায় মূল বিষয় উপস্থাপন করতে হবে।
কাটা ছিড়া না করে স্পষ্ট ভাষাতে ও গুছিয়ে আবেদন পত্র লিখতে হবে। লেখার মধ্যে মার্জিত ভাব থাকতে হবে। আবেদন পত্রের লাইন যেন আঁকাবাঁকা না হয় সেই দিক গুরুত্ব দিতে হবে। কারণ আঁকাবাঁকা হলে দেখতে খুবই বিশ্রী দেখাবে। এর ফলে আপনার ভাবমূর্তি নিয়োগ কর্তার নিকটে অনেক কমে যাবে। একটি চাকরির আবেদন পত্র লেখার সময় যে সব নিয়ম অনুসরণ করতে হয় তা হলো।
- কাগজ নির্বাচন
- আবেদনের তারিখ
- প্রাপকের নাম, পদবি ও ঠিকানা
- আবেদন পত্রের বিষয়
- সম্ভাষণ
- মূল বিষয়
- আবেদনকারীর জীবন বৃত্তান্ত
- অভিজ্ঞতা
- বিনীত/নিবেদক
- আবেদনকারীর নাম ও সাক্ষর
- সংযুক্তি
কাগজ নির্বাচন
আবেদন পত্র লেখার জন্য আপনাকে অবশ্যই একটি উন্নত মানের সাদা কাগজ নির্বাচন করতে হবে। A4 সাইজের কাগজ হলে সবচেয়ে ভালো হয়। কাগজে কলম অতবা পেন্সিল দিয়ে মার্জিন দেওয়া যাবে না। আবেদন পত্রে মার্জিন থাকলে কর্তৃপক্ষ তা বাতিল করে দিতে পারে। আপনি কাগজের উপড়ে ও বাম পার্শে হাফ ইঞ্চি অথবা এক ইঞ্চি করে ভাঁজ করে নিতে পারেন। এতে আপনার হাতের লেখা সোজা হবে ও লাইন বাঁকা হবে না। আরও দেখুনঃ সমাজকর্ম গবেষণার সংজ্ঞা | সমাজকর্মের গবেষণা কাকে বলে
আবেদনের তারিখ
আবেদন পত্রের শুরুতেই বাম পাশে তারিখ দিয়ে লেখা শুরু করতে হয়। অর্থাৎ সবার উপরে তারিখ লিখতে হবে। আপনি যে তারিখে আবেদন পত্রটি দিবেন বা পাঠাবেন সেই তারিখ আবেদন পত্রে ব্যবহার করবেন। খেয়াল রাখতে হবে আবেদন পত্রে উল্লেখ করা তারিখটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের তারিখের পূর্বের কোনো তারিখ না হয়। অর্থাৎ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয়েছে ধরুন ৭ই জুন, তাহলে আপনাকে আবেদন পত্রের তারিখ দিতে হবে ৭ই জুন বা এর পরের কোনো তারিখ। কোনো ভাবেই ৭ই জুনের আগের তারিখ ব্যবহার করা যাবে না।
প্রাপকের নাম, পদবী ও ঠিকানা
তারিখের নিচে বরাবর শব্দটি লিখে আপনি যার নিকট আবেদন পত্র লিখছেন তার পদবী, প্রতিষ্ঠানের নাম ও ঠিকানা সুন্দরভাবে ও সতর্কতার সাথে লিখতে হবে।
আবেদন পত্রের বিষয়
এই অংশে আবেদনের মূল বিষয় উল্লেখ করতে হবে। অর্থাৎ আপনি যে পদের জন্য আবেদন করছেন সেই পদ উল্লেখ করে আবেদনের বিষয় লিখতে হবে।
সম্ভাষণ
আবেদন পত্রের বিষয় বস্তু লেখার পর জনাব, মহাদয় অথবা মহাশয় লিখে প্রাপককে সম্ভাষণ করতে হবে।
মূল বিষয়
প্রাপককে সম্ভাষণ করার পর এই অংশে আবেদনের মূল বিষয় বর্ণনা করতে হবে। আপনি কি পদে আবেদন করছেন, আপনি এই পদের জন্য যোগ্য কি না, আপনি এই চাকরি করতে কতটা আগ্রহী, এই চাকরির বিজ্ঞপ্তি কোথায় পেয়েছেন ইত্যাদি বিষয় উল্লেখ করতে হবে। এই অংশটুকু যাতে খুব বড় না হয় তা খেয়াল রাখতে হবে। খুব সংক্ষেপে মূল বিষয় তুলে ধরতে হবে।
আবেদনকারীর জীবন বৃত্তান্ত
আবেদন পত্রের মূল বিষয় লেখার পর এই অংশে আপনার ব্যক্তিগত তথ্য যেমন,নাম,পিতা মাতার নাম, স্থায়ী ও অস্থায়ী ঠিকানা, জাতীয়তা, ধর্ম, জন্ম তারিখ ইত্যাদি উল্লেখ করতে হবে। এর পর আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতা উল্লেখ করতে হবে। এখানে সকল তথ্যই সঠিকভাবে দিতে হবে। কোনো অসত্য বা ভুল তথ্য দেওয়া উচিত নয়। আরও দেখুনঃ এসএসসি পরীক্ষার রুটিন ২০২৩ (সকল বোর্ড) | ২০২৩ সালের এসএসসি পরীক্ষার রুটিন
অভিজ্ঞতা
আপনার যদি চাকরির অভিজ্ঞতা থাকে তবে এই অংশে তা উল্লেখ করতে হবে। আবার অন্য কোনো কাজের দক্ষতা থাকলে তাও উল্লেখ করতে পারেন।
বিনীত/নিবেদক
আপনার জীবন বৃত্তান্ত ও অভিজ্ঞতা লেখার পর নিচে বিনীত অথবা নিবেদক কথাটি লিখতে হবে।
আবেদনকারীর নাম
বিনীত বা নিবেদক লেখার পর নিচে আপনার পূর্ণ নাম লিখতে হবে ও সাক্ষর প্রদান করতে হবে।
সংযুক্তি
আবেদন পত্রের সাথে আপনি যে সব কাগজ পত্র জমা দিবেন তা এই অংশে উল্লেখ করতে হবে। যেমন, ছবি, শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ পত্রের সত্যায়িত কপি, অভিজ্ঞতার সনদপত্র, নাগরিকত্বের সনদ ইত্যাদি কাগজ পত্রের নাম উল্লেখ করতে হবে।
উল্লেখিত বিষয় গুলো গুরুত্ব সহকারে অনুসরণ করে চাকরির আবেদন পত্র লিখতে হবে। আপনি হাতে লিখে অথবা কম্পিউটারে টাইপ করে প্রিন্ট করেও আবেদন পত্র তৈরি করতে পারবেন। নিচে আপনাদের সুবিধার কথা চিন্তা করে সরকারি চাকরির একটি আবেদন পত্রের নমুনা দেখানো হলো।
চাকরির নমুনা আবেদন পত্র
তারিখঃ
বরাবর,
মহাপরিচালক
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদপ্তর
ঢাকা।
বিসয়ঃ সহকারি শিক্ষক পদে নিয়োগের জন্য আবেদন।
জনাব,
সবিনয় নিবেদন এই যে, গত ৫ই জানুয়ারী ২০২৩ ইং তারিখে ‘দৈনিক প্রথম আলো’ পত্রিকায় প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানতে পারলাম যে, আপনার অধীনে সহকারি শিক্ষক পদে কিছু লোক নিয়োগ করা হবে। আমি উক্ত পদের একজন প্রার্থী হিসেবে আমার জীবন বৃত্তান্ত, শিক্ষাগত যোগ্যতা ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র আপনার সদয় বিবেচনার জন্য নিচে উপস্থাপন করছি।
- নামঃ
- মাতার নামঃ
- পিতার নামঃ
- স্থায়ী ঠিকানাঃ
- অস্থায়ী ঠিকানাঃ
- জন্ম তারিখঃ
- ধর্মঃ
- জাতীয়তাঃ
- রক্তের গ্রূপঃ
- উচ্চতা ও ওজনঃ
- বৈবাহিক অবস্থাঃ
- মোবাইল নংঃ
- শিক্ষাগত যোগ্যতাঃ
পরীক্ষার নাম | গ্রুপ/ বিষয় | জিপিএ/সিজিপিএ | পাসের সন | বোর্ড/বিশ্ববিদ্যালয় |
এস এস সি | .. | .. | .. | .. |
এইচ এস সি | .. | .. | .. | .. |
স্নাতক | .. | .. | .. | .. |
স্নাতকত্তর | .. | .. | .. | .. |
অভিজ্ঞতাঃ যদি থাকে
অতএব বিনীত প্রার্থনা এই যে, উপরোক্ত তথ্যাবলির প্রেক্ষিতে অনুগ্রহপূর্বক আমাকে উক্ত পদের জন্য বিবেচনা করলে বাধিত হবো।
বিনীত নিবেদক
নামঃ
সংযুক্তি
- ৪ কপি রঙিন পি পি সাইজ ছবি।
- শিক্ষাগত যোগ্যতার সত্যায়িত সনদপত্র
- নাগরিকত্বের সনদপত্র
- অভিজ্ঞতার সনদপত্র
- চারিত্রিক সনদপত্র
আশাকরি আমাদের আজকের এই আরটিকেলের মাধ্যমে আপনারা সুন্দরভাবে চাকরির আবেদন পত্র লিখতে কিছুটা হলেও উপকৃত হবেন। এই রকম আরও তথ্যমূলক আর্টিকেল পেতে আমাদের পেজে চোখ রাখুন ও আমাদের সাথেই থাকুন। সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে আজকের মত শেষ করছি। সকলে নিরাপদ ও সুস্থ্য থাকবেন। আল্লাহ হাফেজ।