শবে বরাতের রোজা কয়টি

শবে বরাতের রোজা কয়টি?

শবে বরাতের রোজা কয়টি: আসসালামু আলাইকুম সুপ্রিয় পাঠক বন্ধুরা, সবাইকে স্বাগতম জানাচ্ছি আমাদের আজকের আলোচনা পর্বে। দেখতে দেখতে আগমন ঘটতে চলেছে মাহে রমজানের পবিত্র মাসের। এরই পূর্বে সম্প্রতি আসতে চলেছে পবিত্র শবে বরাত, যা সকল মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের জন্য খুবই পবিত্র একটা দিন এবং সর্বোত্তম রাত। আরও দেখুনঃ
পবিত্র শবে বরাতের ফজিলত | শবে বরাতের ফজিলত ও আমল দলীলসহ

শবে বরাতের রোজা কয়টি

শবে বরাতের রাত মূলত বিশেষ রাত হিসেবে ঈমানদার ব্যক্তিদের কাছে পরিগণিত। কেননা এই রাতে মুসলিমরা সারা রাত মহান আল্লাহতালার এবাদতে মশগুল থাকেন। পাশাপাশি এই দিনে রোজা রাখা অতি উত্তম। কিন্তু শবেবরাতে কতটি রোজা রাখতে হয়, শবে বরাতের রোজা কয়টি! অনেকেই এ সম্পর্কে জানার আগ্রহ প্রকাশ করে থাকেন। 

তাই যে বা যারা শবে বরাতের রোজা কয়টি এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বেড়াচ্ছেন, তাদের জন্য আমাদের আজকের আয়োজন। তাহলে আসুন জেনে নেই, শবে বরাতের রোজা কয়টি এবং শবে বরাতের ফজিলত ও তাৎপর্য সম্পর্কে। আশা করছি– আমাদের আজকের আলোচনা শবে বরাতের রাত সম্পর্কে আপনাদের অনেক কিছু জানতে সাহায্য করবে। সেইসাথে শবে বরাতে কয়টি রোজা রাখতে হয় তার সঠিক তথ্য আপনাদের কাছে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হবে। তাহলে আসুন শুরু করি।

আরও পড়ুনঃ শবে বরাতের নামাজের নিয়ম | শবে বরাতের নামাজের নিয়ম ও দোয়া | শবে বরাতের নামাজের নিয়ম কানুন

শবে বরাতের রোজা কয়টি?

শবে বরাত শব্দটি ফারসি শব্দ। তবে কোরআন ও হাদিসের আলোকে একে বলা হয় “লাইলাতুল নিসফি মিন শাবান”। আর এজন্যই মূলত মানুষ গুগলে শাবান মাসে কয়টি রোজা রাখতে হয়, শাবান রোজা কয়টি,  এমন টাইটেল দেখেও সঠিক উত্তর জানার চেষ্টা করেন। মূলত শবে বরাত ফাঁসি শব্দ হলেও আরবিতে একে লাইলাতু নিসফি মিন শাবান বা মধ্য শাবানের রজনীর বলে সম্বোধন করা হয়। অপরদিকে তাফসীরের ভাষায় এটাকে লাইলাতুস সাক, লাইলাতুর রাহমাহ এবং লাইলাতুল বারাআতও বলা হয়। 

এই নির্দিষ্ট একটি বিশেষ রাতের জন্য মুসলিমদের রোজা রাখাটা অতি উত্তম। এতে মহান রাব্বুল আলামিন সন্তুষ্ট অর্জন করেন এবং তিনি তার বান্দাদের ওপর রহমত বর্ষণ করেন। শবে বরাতের রোজা কয়টি এটা সকলের জেনে রাখাটা খুবই জরুরী এবং শবে বরাতের জন্য রোজা রাখাটাও অতীব জরুরী। 

শবে বরাতের রোজা কয়টি রাখা উত্তম

শবে বরাতের রোজার বিশেষ ফজিলত রয়েছে হাদীস শরীফে। আর তাই শবে বরাতের একটি নফল রোজা রাখা সুন্নত। মহান আল্লাহ তায়ালার সবচেয়ে প্রিয় নবী ও রাসূল হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরআনুল কারীমে বলেছেন, ১৫ সাবানের রাতে তোমরা নফল ইবাদত কর এবং পরদিন রোজা রাখ। সুবহানাল্লাহ। 

তাই শবে বরাতের মূলত একটি রোজা রাখা সর্বোত্তম। তবে হ্যাঁ, বিভিন্ন হাদিসে হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রত্যেক আরবি মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে তিন দিন তিনটি রোজা রাখার নির্দেশনা দিয়েছেন এবং তিনি নফল রোজা রাখতে অধিক বেশি উৎসাহিত করেছেন। তাই সে অনুযায়ী আপনি চাইলে শাবান মাসে অর্থাৎ শবে বরাতের জন্য তিনটি রোজা রাখতেই পারেন। 

অর্থাৎ শবে বরাতের রোজা মূলত সর্বোচ্চ তিনটি রাখা যায়। তবে শবে বরাতের রাতের নামাজ আদায়ের পরবর্তী দিনে একটি রোজা রাখা অবশ্যই জরুরী। 

শবে বরাতের রোজা কয়টি ২০২৩

শবে বরাতের রোজা কয়টি ২০২৩ সালে? এ প্রশ্নের উত্তরে বলব, শবে বরাতের যেকোনো সালে আপনি মূলত তিন দিন রোজা রাখতে পারেন। কেননা এমনটাই আমাদের প্রিয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোরআন ও হাদিসে এরশাদ করেছেন। তাই ২০২৩ সালে শবে বরাতে আপনি তিনটি রোজা রাখতে পারবেন এবং তিনটি না করলেও অবশ্যই আপনাকে শবে বরাতের ফজিলত ও আমল সম্পূর্ণভাবে উপভোগের জন্য একটি রোজা রাখাটা অতীব জরুরী।

শবে বরাতের রোজা কয়টি রাখতে হয়?

শবেবরাতে কয়টি রোজা রাখবেন? যেহেতু হাদিস শরীফে শবে বরাতের রোজা রাখার বিশেষ ফজিলত পাওয়া যায় তাই এটা আমাদের জানতেই হবে। মহান আল্লাহ তায়ালা এবং আমাদের সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ নবী ও রাসুল হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ ব্যাপারে এরশাদ করেছেন– তোমরা রাতে এবাদত করো এবং দিনে রোজা রাখ। আরও পরুনঃ শবে বরাতের নামাজের নিয়ত

তাই এ কথার উপর ভিত্তি করে শবে বরাতের শুধুমাত্র একটি রোজা রাখাটাই শ্রেয়। আপনি মূলত রাতে মহান আল্লাহ তায়ালার এবাদত করার পরবর্তীতে পরদিন রোজা রাখতে পারবেন। তবে বিভিন্ন হাদিসে এটাও এসেছে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রত্যেক আরবি মাসের তিনটা দিন রোজা রাখতেন। তাই এই হিসেবে শবেবরাতের তিনটি রোজা রাখাও সুন্নত। 

শবে বরাতের রোজা কয়টি আল কাউসার

শবে বরাতের রোজা একটি তবে মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনটি রাখতে উৎসাহিত করেছেন এ সম্পর্কে আমরা ইতিমধ্যে আলোচনা করেছি। এ বিষয়ে অন্য একটি হাদিসে এটা এসেছে যে– হযরত উম্মে সালমা ও হযরত আয়েশা রা: থেকে বর্ণিত শাবান মাসের প্রায় পুরোটা সময় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রোজা রাখতেন। তাই সে অনুযায়ী যদি আপনি শাবান মাসে বেশি বেশি নফল রোজা রাখেন তাহলে অধিক সওয়াবের কাজ করা হবে, সুবহানাল্লাহ। 

শবে বরাতের রোজা ২০২৩ কবে

শবে বরাতের রোজা মূলত চাঁদ দেখার উপর নির্ভর করে। আর চাদের ওপর ভিত্তি করে ই এটা নির্ধারণ করা হয়েছে যে শাবান মাসের ১৫ ই রাত অর্থাৎ ১৪ শাবান দিবাগত রাতই হচ্ছে শবে বরাত। সুতরাং শবে বরাতের রোজা ২০২৩ সালে আপনি ১৫ই দিনে রাখতে পারবেন এবং চাইলে শবে বরাতের আগের দিন, মধ্যদিন এবং পরের দিন এই তিনটা দিনও রোজা রাখতে পারবেন আপনি। তবে রোজা রাখার থেকে সর্বোত্তম হচ্ছে শবে বরাতের নামাজ আদায় করা এবং মহান আল্লাহতালার কাছে দোয়া প্রার্থনা করা। 

শবে বরাতের নামাজ, রোজা, আমল ও ফজিলত

ইতিমধ্যে আমরা শবে বরাতের রোজা কয়টি এ সম্পর্কে জেনেছি। কিন্তু শবে বরাতের আমল ও ফজিলত অনেক এ ব্যাপারে কিছু বিস্তারিত আলোচনা করব। কেননা কোরআন ও হাদিসে শবে বরাতের আমল অনেক ফজিলতপূর্ণ এমনটাই উল্লেখ রয়েছে। 

তাই স্বাভাবিকভাবেই আপনার একজন মুসলিম ও ঈমানদার ব্যক্তি হিসেবে শবেবরাতে কি কি আমল করতে হবে সে সম্পর্কে জেনে নেওয়াটা খুবই জরুরী। তাহলে আসুন এ পর্যায়ে এ বিষয়ে জেনে নেই। 

এশার নামাজের পরবর্তীতে নির্জনে দুই রাকাত করে নফল নামাজ পড়ে নেওয়াটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মূলত এই সময় আপনি কত রাকাত পড়লেন সেটা মুখ্য নয় বরং কতটা মনোযোগ এবং দীর্ঘসময়ের জন্য আপনি নামাজ আদায় করলেন সেটাই মুখ্য বিষয়। তাই শবে বরাতের আমল ও ফজিলত সম্পূর্ণভাবে পেতে হলে অবশ্যই মহান আল্লাহ তায়ালার এবাদত বন্দেগী করুন এবং নিজের সবটা মনোযোগ নামাজে সমর্পণ করুন। 

হাদীস শরীফে হযরত আয়েশা রা: থেকে এ বিষয়ে বর্ণিত রয়েছে– আমাদের হযরত মুহাম্মদ সাঃ একদা একদিন নামাজে দাঁড়ালেন এবং এত দীর্ঘ সেজদা করলেন যেটা তার ধারণার বাইরে ছিল। তিনি মনে করলেন হয়তো মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ মৃত্যুবরণ করেছেন। আর এমনটা ধারণা মনে পুষে যাওয়ার পরবর্তীতে তিনি উঠে গিয়ে তার পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুল নাড়া দিলেন। এরপর নবীজি সেজদা থেকে উঠে নামাজ শেষ করে তাকে লক্ষ্য করলে বললেন—

” হে আয়েশা তুমি কি আশঙ্কা করেছ?”

তখন উত্তরে তিনি জানান, আপনার দীর্ঘ সেজদা দেখে আমার আশঙ্কা হয়েছিল যে আপনি মৃত্যুবরণ করেছেন। একথা জানার পর মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তুমি কি জানো এটা কোন রাত? তখন তিনি বলেন আল্লাহ ও তাঁর রাসূল অবশ্যই এ সম্পর্কে অধিক বেশি ভালো জানেন। তখন আমাদের রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এটা বলেন– এটা হচ্ছে মধ্য শাবানের রাত। এই রাতে আল্লাহ তার বান্দাদের প্রতি মনোযোগ দেন এবং ক্ষমা প্রার্থনা কারীদের ক্ষমা করে দেন। শুধু তাই নয় অনুগ্রহ প্রাণীদের অনুগ্রহ করেন আর বিদ্বেষ পোষণকারীদের কে তাদের অবস্থাতেই ছেড়ে দেন। সুবাহানাল্লাহ। 

তাই এসব হাদিস এবং আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা এটা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছি যে, শবে বরাতের নামাজ ও আমলের দিকে অত্যন্ত মনোযোগী হওয়াটা জরুরী এবং এই দিন বেশি বেশি ক্ষমাপ্রার্থনা করা আমাদের উচিত। তবে মনে রাখবেন এই দিন আল্লাহতালা দুই ধরনের ব্যক্তিদের ছাড়া বাকি সকলকে ক্ষমা করে দেন। প্রথমত যারা শিরক এবং দ্বিতীয়তঃ যারা হিংসা করে। তাই আসুন শিরক হিংসা সহ সকল প্রকার খারাপ কাজ থেকে আমাদের মনকে দূরে রাখার চেষ্টা করি এবং মহান আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দেখানো পথে চলি। 

পরিশেষে: শবে বরাতের রোজা কয়টি, এ সম্পর্কে আমাদের আলোচনা পর্ব এখানেই শেষ করছি। তো সুপ্রিয় পাঠক বন্ধুরা আশা করি আপনারা আপনাদের কাঙ্খিত প্রশ্নের উত্তর আমাদের আজকের আলোচনায় অবশ্যই পেয়ে গেছেন। আজ এ পর্যন্তই সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন। সবাইকে আল্লাহ হাফেজ। 

আরও দেখুনঃ

Google News

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *