শিল্পায়ন ও শহরায়ন এর পার্থক্য: শিল্পায়ন ও শহরায়ন এর মধ্যে মিল থাকলেও বৈশিষ্ট্যগত দিক থেকে এর পার্থক্য পরিলক্ষিত। শিল্পায়নের সঙ্গে যান্ত্রিক উৎপাদনের সম্পর্ক রয়েছে যা দেশের অর্থনীতিতে বিরাট ভূমিকা রাখে। অন্যদিকে শহরায়ন হলো শহরে বসবাস এবং এর মাধ্যমে সামাজিক রীতিনীতির পরিবর্তন ঘটানো।সুতরাং শহরায়ন ও শিল্পায়নের মধ্যে পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়।
শিল্পায়ন ও শহরায়ন এর পার্থক্য
শিল্পায়ন ও শহরায়ন এর মধ্যে যথেষ্ট মিল থাকলেও এদের মধ্যে কতিপয় পার্থক্য রয়েছে। যা নিম্নে উল্লেখ করা হলো:
১.সংজ্ঞাগত: শিল্পায়ন ও শহরায়ন এর মধ্যে সংজ্ঞাগত পার্থক্য রয়েছে। শিল্পায়ন বলতে আমরা শিল্পক্ষেত্রে উৎপাদন ব্যবস্থার উন্নয়নকে বুঝি অর্থাৎ মনুষ্যনির্ভর উৎপাদন ব্যবস্থার স্থানে যান্ত্রিক পদ্ধতিতে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটিয়ে উৎপাদন প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করাবুঝায়। অন্যদিকে শহরায়ন বলতে বোঝায় গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর শহরের পরিবেশে বসবাসের জন্য শহরমুখী হওয়া অর্থাৎ শহরমুখীর প্রবণতাকে বোঝায়।
২.উদ্ভবগত: অষ্টাদশ শতাব্দীতে ইংল্যান্ডে সংগঠিত শিল্প বিপ্লবের সময়কালে শিল্পায়নের সূচনা হয় বলে মূলত ধরে নেয়া হয় বা তার পরবর্তী সময়ে। কিন্তু প্রাচীনকাল থেকে নগরের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায় যা আমরা প্রাচীন গ্রিসের সভ্যতার নিদর্শন ধরে নিতে পারি যেখানে ছোট ছোট নগর রাষ্ট্র ছিল।
৩.পদ্ধতিগত: যান্ত্রিক উপায়ে উৎপাদন বাড়ানোর প্রক্রিয়া হল শিল্পায়ন কিন্তু শহরায়ন হল একটি জীবন পদ্ধতি যেখানে মানুষ বসবাসের উদ্দেশ্যে শহর গড়ে তুলে।
৪.পরিবর্তনগত: শিল্পায়ন বলতে মূলত আমরা উৎপাদন ব্যবস্থার পরিবর্তনকে বুঝি। অন্যদিকে শহরায়ন হচ্ছে জনসংখ্যার স্থানিক পরিবর্তন, পেশার পরিবর্তন এবং জীবনযাত্রার পরিবর্তন।
৫. ধারণার ভিন্নতা: যান্ত্রিক উৎপাদনের মাধ্যমে অর্থনৈতিক গতিকে বৃদ্ধি করার মাধ্যম হচ্ছে শিল্পায়ন। বিপরীতে, শহরায়ন হচ্ছে শহরে বসতি স্থাপন করা, কৃষি ও গ্রামীণ পেশাকে ত্যাগ করে শহরের বিভিন্ন পেশার সঙ্গে জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন করা।
৬. স্থাপনাগত: শিল্পায়নের ফলে কলকারখানা স্থাপনের জন্য প্রচুর পরিমাণে জায়গার প্রয়োজন হয় আর এক্ষেত্রে অনেক আবাসস্থল ক্ষতির সম্মুখীন হয়। আবার শিল্পায়নের ফলে প্রচুর পরিমাণে শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে অন্যদিকে ফারহানের ক্ষেত্রে পুঞ্জিভূত বসতির সৃষ্টি হয়। অর্থাৎ শহরে বসবাসের প্রবণতায় অনেক বস্তির সৃষ্টি হতে পারে।
৭. জীবনধারনগত: শিল্পায়ন মানুষের উন্নত জীবন ধারণের পথ তৈরি করে দেয়। যেখান থেকে মানুষ তাদের অর্থনীতিকে সচল রাখে। অন্যদিকে, শহরায়ন মানুষকে উন্নত জীবনযাপনে অভ্যস্ত করে তুলেন পাশাপাশি বস্তির সৃষ্টি করে।
পরিশেষে বলা যায় যে, শিল্পায়ন ও শহরায়ন সাধারণভাবে একই সঙ্গে ব্যবহৃত হলেও যথেষ্ট পার্থক্য বিদ্যমান। তবে শিল্পায়ন ও শহরায়ন ছাড়া আধুনিক সমাজের উন্নয়ন সম্ভব নয়। আধুনিক জীবনধারায় শিল্পায়ন ও শহরায়নের সম্পর্ক নিবিড়।