স্যার সৈয়দ আহমদ খাঁ ছিলেন আলীগড় আন্দোলনের মূল প্রবর্তক। পিছিয়ে পড়া মুসলিম শিক্ষার্থীদের কে এগিয়ে নেওয়ার জন্য বাংলাদেশের আলীগড় আন্দোলন গড়ে তোলেন স্যার সৈয়দ আহমেদ খাঁ যা ইতিহাসে আলীগড় আন্দোলন নামে পরিচিত। ১৮৭৫ খ্রিস্টাব্দে বিদ্রোহের পর অনগ্রসর মুসলিম সমাজে কিছু কিছু সংস্কারের প্রয়োজন অনুভূত হয় । হিন্দুদের তুলনায় পাশ্চাত্য শিক্ষায় উদাসীন মুসলিম সমাজের দুরবস্থার কথা স্যার সৈয়দ আহমেদ খাঁ অবগত ছিলেন । কাজেই মুসলমানদের আধুনিক ও সময়োপযোগী শিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে আলীগড় আন্দোলন গড়ে ওঠে। আরও দেখুনঃ শিল্পায়ন ও শহরায়ন এর পার্থক্য | শিল্পায়ন বনাম শহরাঞ্চল
আলীগড় আন্দোলনের উদ্দেশ্য সমূহ
স্যার সৈয়দ আহমদ খাঁ আলীগড় আন্দোলনের জন্য বিখ্যাত হয়ে আছেন তিনি এই আন্দোলনের কতকগুলো লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে গড়ে তোলেন যা নিম্নে উল্লেখ করা হলো:
১. তৎকালীন মুসলমান সমাজ ইংলিশ বিদ্বেষী আধুনিক সংস্কারমূলক কার্যক্রমকে মেনে নেয়নি যার ফলে তারা পিছিয়ে পড়েছে। আলীগড় আন্দোলনের মূল লক্ষ্য ছিল মুসলমানের মধ্য থেকে বিভিন্ন অজ্ঞতা ও কুসংস্কার দূর করে শিক্ষার বিস্তার ঘটানো।
২. মুসলমানদের মন থেকে পাশ্চাত্যের ভয় ভীতি দূর করার জন্য ও মুসলমানদের মধ্যে উদারনৈতিক ভাবধারা প্রচারের লক্ষ্যে ‘তাহজিব-উল-আখলার্ক’নামে একটি পত্রিকা প্রকাশ করেন স্যার সৈয়দ আহমেদ খাঁ ।
৩. আলীগড় আন্দোলনের অন্যতম লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ছিল অক্সফোর্ড ও কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুকরণে১৮৭৫ খ্রিস্টাব্দে আলিগড়ে মহামেডান অ্যাংলো ওরিয়েন্টাল কলেজ -এর প্রতিষ্ঠা করা । এই কলেজটিই পরে আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয় [Aligarh Muslim University] নামে পরিচিত হয় । ইংরেজ শিক্ষাবিদগণের তত্ত্বাবধানে এই কলেজে কলা ও বিজ্ঞান শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয় । মুসলমান ছাত্রদের মধ্যে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসার ও প্রগতিমূলক মনোভাবের উন্মেষ ঘটানোর ক্ষেত্রে এই কলেজের অবদান অস্বীকার করা যায় না ।
৪.তৎকালীন মুসলমানগন পির পূজার প্রচলন করেছিল। স্যার সৈয়দ আহমদ খাঁ আলীগড় আন্দোলনের মাধ্যমে পীর মুরিদ ও দাস প্রথার উচ্ছেদ করেন এবং মুসলিম সমাজকে আধুনিক ধ্যান-ধারনা উদ্বুদ্ধ করার প্রচেষ্টা চালান।
৫.স্যার সৈয়দ আহমদ খাঁ আলীগড় আন্দোলনে মুসলমানদের মধ্যে নবজাগরণের সৃষ্টি করে যার গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য ছিল। এই নবজাগরণ সৃষ্টির লক্ষ্যে তিনি ‘তাহযীল উল আখলাক’ নামে একটি পত্রিকা প্রকাশ করেন যা ১৮৮৬ সালে মুসলিম শিক্ষা সম্মেলন, মুসলিম শিক্ষা উন্নয়ন, সমিতি গঠন ইত্যাদি কাজের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।
৬.এই আন্দোলন ভারতীয় মুসলমানদের মধ্যে যুক্তিবাদের প্রসার ঘটাতে, তাদের ধর্মীয় ও সামাজিক গোঁড়ামি পরিত্যাগে সাহায্যকরে যা ছিল অন্যতম উদ্দেশ্য । এছাড়াও মুসলিম সমাজে নারীদের মর্যাদা বৃদ্ধি, পর্দা প্রথার অপসারণ ও নারী শিক্ষা প্রসারে প্রয়োজনীয়তার কথাও উল্লেখ করা হয় ।
পরিশেষে এটা বলা যায় যে, আলীগড় আন্দোলনের ফলে মুসলিম সম্প্রদায় তাদের জাতীয়তাবাদের বিকাশ, অধিকার ও স্বাধীনতা অর্জনের বিষয়ে সচেতন ও জাগ্রত হয়। মুসলিম সমাজ আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান, শিক্ষা-দীক্ষায় নিজেদের সমৃদ্ধ করে তোলেন। আলিগড় আন্দোলনের অবদান প্রসঙ্গে ঐতিহাসিক রমেশচন্দ্র মজুমদার মন্তব্য করে বলেছেন যে, “উনবিংশ শতাব্দীর নবজাগরণ ও জাতীয়তাবাদী আন্দোলন হিন্দুদের কাছে যা ছিল, আলিগড় আন্দোলনও ছিল মুসলিমদের কাছে ঠিক তাই”।